কুপিয়ে-গুলি করে তিন ভাইকে হত্যা, চেয়ারম্যানের দাবি পিটুনি

Looks like you've blocked notifications!

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নে তিন সহোদরকে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুর দেড়টার দিকে ইউনিয়নের কাজীনগর এলাকায় কাজী বাড়ির মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

তবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল আমিন স্বপনের দাবি, ‘গণপিটুনিতে মারা গেছেন ওই তিন ভাই।’

নিহতরা হলেন কাজী মোকসেদ উল্লাহর তিন ছেলে কাজী হারুন উদ্দিন (৩৫), কাজী বাবলু (৩০) ও কাজী কামাল উদ্দিন (২৮)।

নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার মো. হাসান শরীফ এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, আজ দুপুরে বাড়ির সামনের মাঠে ছোট একটি গোলবারকে ঘিরে ফুটবল খেলছিলেন কাজী বাবলু। তিনি একটি গোল করলে প্রতিপক্ষের রফিক নামে একজন তাঁর সঙ্গে তর্ক করে। একপর্যায়ে বাবলু রফিককে ঘুষি মারলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বাবলুকে মারধর করে রফিক ও মাঠে উপস্থিত অন্যরা। এ সময় আশপাশের বাড়ি থেকে দা ও অন্যান্য স্থানীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রফিকের বাড়ির লোকেরা আসে। একপর্যায়ে বাবলুর সহোদর হারুণ এগিয়ে এলে তাঁকে কোপানো হয়। এরপর কোপানো হয় তাঁদের আরেক সহোদর কামাল উদ্দিনকে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান হারুণ ও বাবলু। আর গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে কামাল উদ্দিন মারা যান।

নিহতদের বাবা মোকসেদ উল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নিজেদের পারিবারিক জায়গায় মসজিদ বানাতে চাওয়ায় তাঁর তিন ছেলেকে কুপিয়ে ও গুলি করে খুন করা হয়েছে। রফিক, খালেক, মাসুম, আজিম, সাদ্দাম আর তাদের বাড়ির লোকজন মিলে আমার তিন ছেলেকে খুন করেছে।’

মোকসেদ উল্লাহ বিলাপ করতে করতে বলেন, তাঁর দুই ছেলে বাবলু আর হারুনকে রাস্তার ওপর সবার সামনে পিটিয়ে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। অপর ছেলে কামাল পিঠে আর মাথায় কোপ খেয়ে বাঁচতে চেয়েছিল। প্রাণ বাঁচাতে আহত অবস্থায় দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়িতে চলেও এসেছিল। কিন্তু তাঁকে তাড়া করে তাঁর নিজে বাড়ির উঠানে এসে গুলি করে মেরেছে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী রফিক।

ঘটনার তদন্তকারী পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে জানান, ‘ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন- পিটিয়ে, কুপিয়ে ও গুলি করে তিন ভাইকে খুন করা হয়েছে।’ গুলির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তাঁকে আবার প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, গুলি করার শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন এলাকাবাসী। নিহতদের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে দায়ের কোপের চিহ্ন ছিল। এদের মধ্যে দুই ভাইকে পায়ের রগ কেটে ও এক ভাইকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। 

ঘটনার পর বিকেলে নাটেশ্বর ইউপির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন স্বপনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি গতকাল থেকে ডায়রিয়া হয়ে গুরুতর অসুস্থ। তাই আজ ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। তবে তিনি জানান, বহুদিন ধরেই কাজী বাড়ির সামনের মসজিদ নির্মাণ নিয়ে নিহত তিন ভাইয়ের সঙ্গে এলাকাবাসীর বিরোধ চলে আসছিল। রোববার জোহরের নামাজের পর বেলা দেড়টা নাগাদ মসজিদের জমি নিয়ে মুসল্লিদের সঙ্গে নিহত তিন ভাইয়ের আবার বিরোধ ও কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তিন ভাইকে ধরে পিটুনি দেয়। 

সোনাইমুড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হানিফুল ইসলাম বলেন,  ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে এই তিন ভাইকে এলাকাবাসী পিটিয়ে হত্যা করে। 

গুলি করা এবং পায়ের রগ কেটে দেওয়ার প্রসঙ্গ ওঠালে ওসি বলেন, ‘না ভাই, এ রকম কোনো লক্ষণ আমি দেখি নাই।’ 

ওসি হানিফুল ইসলাম আরো জানান, ঘটনাস্থল থেকে নিহত দুই ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। আরেক ভাই কামাল উদ্দিনের লাশ নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনার পর নাটেশ্বর ইউনিয়নে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।