মেয়াদ শেষ ১৫ মাস আগেই, তবুও পূর্ণাঙ্গ কমিটির আশা!
দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারা এবং একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে হ-য-ব-র-ল অবস্থা রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের। সভাপতি-সম্পাদকের পৃথক দুটি গ্রুপে বিভক্ত নেতাকর্মীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জেরবার ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠনটির নেতারা প্রকাশ্যে নিজেদের মধ্যে ঐক্যের কথা বললেও বাস্তব চিত্র কিন্তু ভিন্ন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সভাপতি ও সম্পাদকের বিরোধে দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি এই কমিটি; বরং এখন মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার ১৫ মাস পর সভাপতি ও সম্পাদক দুজনই আশা করছেন, এই মাসেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে।
এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা জানিয়েছেন, কমিটি অনেক আগেই হতো, কিন্তু সভাপতি আবদুল জব্বার সুজনের কারণে কমিটি হতে দেরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তাঁর পছন্দদের মধ্য থেকে অসংখ্য অযোগ্যকে তিনি কমিটিতে ঢুকিয়েছেন। আমাদের পরীক্ষিত কর্মীদের তিনি কমিটিতে নিতে দিচ্ছেন না। তাই কমিটি হতে দেরি হচ্ছে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনার পর কমিটি এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে, আশা করছি চলতি সেপ্টেম্বরেই কমিটি হয়ে যাবে।’
আর সভাপতি আবদুল জব্বার সুজন এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করতে চাননি। এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনি আমার সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেন।’
সুজন আরো বলেন, ‘অতীতে হয়তো অনেকেই ভুল রাজনীতি করেছে। এখন তারা আমাদের সঙ্গে থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দলে আসছে। তবুও আমরা তাদের যাচাই-বাছাই করেই দায়িত্ব দেবো।’ তবে এ মাসেই কমিটি সম্পূর্ণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সভাপতিও।
কিন্তু ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানিয়েছেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যাই বলুন না কেন, ভেতরের খবর কিন্তু অন্য। মূলত নিজেদের অনুসারীদের কমিটিতে রাখা নিয়ে বিরোধে কমিটি দিতে পারেনি ছাত্রলীগ।
দুই বছর আগে ২০১৫ সালের ২ জুন জেলা সম্মেলনে ছয় সদস্যের জেলা ছাত্রলীগ কমিটি ঘোষিত হয়েছিল, দীর্ঘ দুই বছরে তা আর পূর্ণতা পায়নি। ওই কমিটিতে আবদুল জব্বার সুজনকে সভাপতি, সাইফুল আলম রাশেদ ও কাউসার রুমিকে সহসভাপতি, রুবেল চৌধুরীকে যুগ্ম সম্পাদক, প্রকাশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও টিপুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছিল।
এই ছয়জনের একজন যুগ্ম সম্পাদক রুবেল চৌধুরী সরকারি চাকরিতে যোগদান করায় আয়তনেও কমেছে ছয় সদস্যের কমিটি। এখন পাঁচজনের নেতৃত্বেই চলছে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ।
এদিকে দুই বছরেও জেলা ছাত্রলীগের কমিটি না হওয়ায় ও বর্তমান কমিটির কার্যক্রমের কারণে এই কমিটির প্রতি আস্থা নেই ১০টি উপজেলার বেশিরভাগ নেতাকর্মীর।
রাজস্থলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অংচাসিন মারমা বিজয় বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই ছাত্রলীগ করি, এটা আমার দেখা সবচেয়ে ব্যর্থ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। এদের কোনো যোগ্যতাই নেই জেলায় নেতৃত্ব দেওয়ার। যেখানে আমি তিন দিনেই আমার উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করেছি, সেখানে তারা দুই বছরে এটা পারেনি। এদের কারণেই আজ আমাদের বয়স পেরিয়ে গেলেও জেলা কমিটিতে আসতে পারলাম না।’
লংগদু উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মুহম্মদ জিয়াউল বলেন, যে কমিটি দীর্ঘ দুই বছরেও একটি জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারে না, তাদের দায়িত্ব পালনের কোনো অধিকারও নেই। আর যেহেতু মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে, নতুন জেলা সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্বের হাতেই জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্ব তুলে দেওয়া উচিত।
জেলার আরেকটি উপজেলার একজন সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই কমিটির মেয়াদ তো ১৪ মাস আগেই শেষ, এখন তারা বলছে সেপ্টেম্বরে কমিটি করবে! তবে তাদের মেয়াদ কতদিন চলবে এবং আগামী কমিটি কত বছর পর হবে? নতুন নেতৃত্ব কেউ কি তবে ছাত্রলীগে আসতে পারবে না? তিনি অভিযোগ করেন, উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের বিভিন্ন কমিটিতে পদ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছে সভাপতি ও সম্পাদক।