পদ্মায় লঞ্চডুবি : নিখোঁজদের উদ্ধারে চলছে যৌথ অভিযান

Looks like you've blocked notifications!
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় পদ্মার ভাঙনে পন্টুন ছিঁড়ে তিনটি লঞ্চডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ১৫ জনকে উদ্ধারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। ছবি : ফোকাস বাংলা

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় পদ্মার ভাঙনে পন্টুন ছিঁড়ে তিনটি লঞ্চডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ১৫ জনকে উদ্ধারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। 

আজ সোমবার ভোরের দিকে পদ্মা নদীর ভাঙন ও তীব্র স্রোতে নড়িয়ার ওয়াপদা লঞ্চঘাটে নোঙর করা তিনটি লঞ্চ ডুবে যায়। এ ঘটনায় পাঁচদিনের নবজাতকসহ তিন যাত্রী ও তিন লঞ্চের ১২ জন কর্মী নিখোঁজ রয়েছেন।

এরই মধ্যে এমভি মৌচাক নামের নিখোঁজ লঞ্চটিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর দুলারচর এলাকায় পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে এসেছে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’।

নিখোঁজ যাত্রীরা হলেন নড়িয়ার লুনশিং গ্রামের মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী পারভীন বেগম (২৮), শাশুড়ি ফকরন বেগম (৫০) ও পাঁচদিনের নবজাতক।

লঞ্চের নিখোঁজ কর্মীরা হলেন রবিন সরদার (২০), লিটন শেখ (২৫), মানিক মাতবর (৩৫), বশির (২৯), রফিক (৫০), জাকির (৪৫), জয় (১৯), পলাশ (২০), সাদেক (২৫), সজল তালুকদার (৩৮), শাহ আলম (৩৫) ও সালাউদ্দিন (৩০)।

এ ঘটনায় শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মিজানুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মৌচাক লঞ্চে নড়িয়ার লুনশিং গ্রামের মোহাম্মদ আলী তাঁর স্ত্রী পারভীন বেগম (২৮), শাশুড়ি ফকরন বেগম (৫০) ও পাঁচদিন আগে জন্ম নেওয়া মেয়েকে নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। লঞ্চটি ঘাটে পৌঁছার পর যাত্রীরা নেমে যায়। তবে ভোর হওয়ার আশায় পরিবার নিয়ে লঞ্চেই অপেক্ষা করছিলেন মোহাম্মদ আলী। এ সময় হঠাৎ পদ্মাপাড়ের একটি বিরাট অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে। এতে পানির তোড়ে লঞ্চটি ডুবে যায়। এ সময় ঘাটে নোঙর করা মহানগর ও নড়িয়া-২ নামের লঞ্চ দুটিও ডুবে যায়। পরে মোহাম্মদ আলীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অন্যরা এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন জানান, একই পরিবারের তিনজন ও ১২ জন লঞ্চকর্মী নিখোঁজের তালিকা তৈরি করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে কাঁচিকাটা দুলারচরে ডুবে যাওয়া এমভি মৌচাক নামের নিখোঁজ লঞ্চটি আটকানো হয়েছে।

উদ্ধারে যৌথ দল

ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর ১১ সদস্যের একটি ডুবুরিদল এবং সেনাবাহিনীর কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছেন। শরীয়তপুর নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ডুবে যাওয়া লঞ্চ ও নিখোঁজদের উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যয় নামে বিআইডাব্লিউটিএর একটি উদ্ধারকারী জাহাজ, ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরিদল এবং খুলনা থেকে নৌবাহিনীর ১৫ সদস্যের আরেকটি ডুবুরিদল কাজ করছে। আজ বিকেল ৫টায় উদ্ধারকারী জাহাজ এমভি প্রত্যয় ঘটনাস্থলে আসে। দুলারচর থেকে এমভি মৌচাক লঞ্চটি উদ্ধারের প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রত্যয়। পদ্মাপাড়ের ওয়াপদা ঘাটে নিখোঁজদের স্বজন ও উৎসুক জনতার ভিড় বাড়ছে।

বিআইডাব্লিউটিএর পরিচালক কমোডর মোজাম্মেল হোসেন, চাঁদপুর পোর্টের উপপরিচালক মাহমুদুল হাসানসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ বলেন, ‘লঞ্চডুবির সংবাদ জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে চলে আসি। নৌপুলিশের একটি দল ও ফায়ার সার্ভিস এরই মধ্যে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে। 

শরীয়তপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবা আক্তার বলেন, নিখোঁজ লঞ্চ ও ব্যক্তিদের উদ্ধারে কাজ চলছে। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।