‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পড়তে দেওয়া হয় না’
মিয়ানমারের একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে পারভীন ফাতেমা। তার গ্রামের নাম টংবাজার। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয়দের চলমান সহিংসতা থেকে বাঁচতে স্বজনদের নিয়ে পাহাড়ের বনে আশ্রয় নেয় তারা। পরে চার দিন ধরে হেঁটে পাড়ি দিয়েছে খাল-নদী। ভাইবোনদের সঙ্গে গতকাল সোমবার সীমান্ত পেরিয়ে উখিয়ায় আসে ফাতেমারা।
ফাতেমা কথা বলে রোহিঙ্গাদের আঞ্চলিক ভাষাতেই। কক্সবাজারের আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে যার অনেকটাই মিল রয়েছে। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিও বলতে পারে সে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সে জানে, তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তবু সে স্বপ্ন দেখে আরো পড়াশোনা করার। ফাতেমার সঙ্গে কথা হয় বর্তমান পরিস্থিতি, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষার অধিকারসহ নানা বিষয় নিয়ে।
কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নে আনজুমানপাড়ায় ফাতেমার সঙ্গে এনটিভি অনলাইনের হওয়া সেই কথোপকথনটি প্রমিত বাংলায় পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
এনটিভি অনলাইন : ফাতেমা, তুমি পড়াশোনা করো?
ফাতেমা : হ্যাঁ, ক্লাস টেনে পড়ি। বিজ্ঞান বিভাগে, টংবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে (মিয়ানমারে)।
এনটিভি অনলাইন : এখন যে চলে এলে?
ফাতেমা : আমাদের স্কুল এখন বন্ধ। রোহিঙ্গা এলাকার সব স্কুলই এখন বন্ধ। ঈদের আগেও আমাদের ক্লাস হয়েছে। এর পর শুরু হলো সহিংসতা। সেনারা এসে বলল, বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে। তার পর থেকে স্কুলও বন্ধ হয়ে গেল।
এনটিভি অনলাইন : স্কুলের শিক্ষকরা…
ফাতেমা : স্কুলের শিক্ষকদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা হওয়ায় অনেকে খুন হয়েছেন। অনেকে এলাকা ছেড়েছেন।
এনটিভি অনলাইন : তোমাদের স্কুলে রোহিঙ্গাদের বাইরে কোনো শিক্ষার্থী নেই?
ফাতেমা : ছিল। মগ (বৌদ্ধ) ছেলেমেয়েরা পড়ত। কিন্তু কিছুদিন আগে ওদের সরিয়ে নিয়েছে ওদের বাবা-মা।
এনটিভি অনলাইন : দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছ। এখন যে চলে এসেছ, পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল না?
ফাতেমা : বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষকে গলা কেটে মেরে ফেলছে। মেয়েদের ওপর জুলুম করছে। ওখানে কি থাকা যায়? আগে তো প্রাণ বাঁচাতে হবে, তাই না?
এনটিভি অনলাইন : তোমাদের ওপর সহিংসতা শুরু না হলো তো পড়াশোনা চালিয়ে যেতে, তাই না?
ফাতেমা : না, চালিয়ে যেতে পারতাম না। আমাদের ওখানে (মিয়ানমারে) ইচ্ছে করলেই আমরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারি না। রোহিঙ্গা ছেলেমেয়ে দশম শ্রেণির বেশি পড়তে পারে না। পড়তে দেওয়া হয় না। কোনো কলেজ রোহিঙ্গাদের ভর্তি করায় না।
এনটিভি অনলাইন : তাহলে কি কোনো রোহিঙ্গা উচ্চশিক্ষা নেয় না?
ফাতেমা : কীভাবে নেবে? নিতে তো দেয় না। উচ্চশিক্ষার তো অধিকারই নেই। পরিচয় গোপন করে যদি কেউ করে, সেটা অন্য ব্যাপার। করতে পারলে তো ভালো।
এনটিভি অনলাইন : এখন তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ফাতেমা : জীবন বাঁচিয়েছি। ইচ্ছা আছে পড়াশোনা করার। অনেক পড়াশোনা করতে চাই। বাংলাদেশে এসেছি। আর ফিরতে চাই না। ওখানে আর শান্তি আসবে না। এখানে সুযোগ পেলে পড়াশোনা করব।