কান্না সেই ঘরটির জন্য
মাত্র ৪০ দিন আগে মা হয়েছেন সেতারা বেগম। একেবারেই তরুণী। নবজাতককে যে একটু স্বস্তিতে রাখবেন, সে উপায়ও নেই। জন্মের কিছুদিন পরই ঘর ছাড়তে হয় সেতারাকে। তাঁর অপরাধ, তিনি একজন রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হুমকির মুখে ঘর ছেড়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার শাহপরীর দ্বীপ থেকে হাড়িয়াখালী আসছিলেন সেতারা। কোলে ৪০ দিনের শিশু। শিশুর মুখটি ঢেকে রেখেছিলেন রোদের কারণে। নাফ নদ পেরিয়ে শাহপরীর দ্বীপে এসেছেন গতকালই। আর কোথাও অপেক্ষা না করে দ্রুত পা চালাচ্ছিলেন হাড়িয়াখালীর দিকে। সেতারার স্বামী সিরাজ উল্লাহ বেশ কয়েক দিন আগেই নিখোঁজ হন। মিয়ানমারের সেনারা ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আর কোনো খোঁজ মেলেনি তাঁর।
এমনই সময় এক কিশোর ডাক দেয় সেতারাকে। নিজেদের মধ্যে আলাপ হয়। এরপরই কান্নায় ভেঙে পড়েন সেতারা। কোলের শিশুকে নিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন তিনি।
কী হয়েছে জানতে চাইলে সেতারা জানান, খবর পেলেন তাঁর গ্রামটি একেবারে জ্বালিয়ে দিয়েছে সেনারা। ঘর ছাড়ার আগে সবকিছু দেখেই বের হন তিনি। তখনো তাদের ঘরে আগুন দেওয়া হয়নি। সেতারা ভেবেছিলেন, হয়তো সমস্যাটা সাময়িক। ঘরটা থাকুক। আশা, আবার ফিরে গেলে নিজের ঘরেই উঠতে পারবেন তিনি।
স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর নবজাতককে নিয়ে বোনদের সঙ্গে ঘর ছাড়েন তিনি। পথে একাধিক স্থানে লুকিয়ে ছিলেন। গভীর রাতে পাড়ি দিতে হয়েছে নাফ নদ। সেতারা জানান, সবই কোলের শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য। সদ্য পৃথিবীতে আসা অবুঝ এই শিশুটির তো কোনো দোষ নেই।
শিশুর পাশাপাশি ঘরটির জন্যও মায়া ছিল সেতারার। ভেবেছিলেন, ঘরটা ঠিক থাকবে। জানালেন, ঘরটা তার নিজের হাতে গড়া। তিনি জানান, তাঁর বিশ্বাস ছিল, ‘শান্তি’ এলে আবার নিজ দেশে ফিরবেন। ফিরবেন নিজের ঘরে।
কিন্তু ওই খবর শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সেতারা। কান্না বলতে রীতিমতো আহাজারি করছিলেন তিনি। তাঁর বোনেরাও সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন না। ঘরহীন, দেশহীন সেতারার কোলে ৪০ দিনের শিশু। তিনি কেবলই কাঁদছেন ঘরটির জন্য। নিজের দেশের জন্য।