কুশপুতুল দাহের হিড়িক এমপি ফকিরের সমর্থকদের
বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী ‘নৌকা’ মার্কার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন, তাঁদের কুশপুতুল দাহ করছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকিরের সমর্থকরা।
ঈদের পর গত গত ১৯ জুলাই রাতে উপজেলা সদরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য মজিবুর রহমানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মোরশেদুজ্জামান সেলিমের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এর পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে সংসদ সদস্যের অনুসারীরা তাঁদের প্রতিপক্ষের কুশপুতুল দাহ করে বিক্ষোভ দেখান।
এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার মাইলাকান্দা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যাংকার ফেরদৌস আলম ও তাঁর স্ত্রী নাজনীন আলমের কুশপুতুল দাহ করা হয়। এ সময় তাঁদের এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
নাজনীন আলম ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ওই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হরিণ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। ফেরদৌস আলম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক এবং তাঁর স্ত্রী নাজনীন আলম সহ-সাধারণ সম্পাদক।
গোবিন্দপুর বাজারে কুশপুতুল দাহের পর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মালেক মাস্টার, মাযহারুল আনোয়ার বাচ্চু, ইউপি সদস্য শামসুল আলম, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক তারা, সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলী, কাজী মঞ্জুরুল হক খোকন, করিম উল্লাহ, ছাত্রলীগ নেতা রানা প্রমুখ।
এ ছাড়া গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার শাহগঞ্জ ইউনিয়ন বাজারে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ খান সেলভীর কুশপুতুল দাহের পর তাঁর বিরুদ্ধে মিছিল বের হয়। সেলভীও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় মজিবুর রহমান ফকিরের বিরুদ্ধে নাজনীন আলমের হরিণ প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন।
শাহগঞ্জ ইউনিয়ন বাজারের সমাবেশে বক্তব্য দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক মেম্বার, সহসভাপতি ডা. মো. শহীদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম অন্তর, সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রমুখ।
নির্বাচনের সময় ‘নৌকা’র পক্ষে কাজ না করায় এসব দলীয় নেতাকর্মীর কুশপুতুল দাহ করা হচ্ছে বলে শুক্রবার এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন সংসদ সদস্যের সমর্থক ও গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিধুভূষণ দাশ। তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল শেখ হাসিনার জন্য চ্যালেঞ্জ। নাজনীন আলম হরিণ মার্কায় নির্বাচন করেছেন। সেলভীও তাঁর পক্ষে কাজ করেছেন। তাঁরা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাই এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের কুশপুতুল দাহ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।’
মোরশেদুজ্জামান সেলিমের ওপর হামলা চালানো হয় উপজেলা সদরের ধানমহালে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নিজামুদ্দিন বাবুলের গদিতে। বাবুল ছিলেন নাজনীন আলমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিধুভূষণ দাশ আরো বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আমি বলেছি, ওই দিন আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ হয়ে হরিণ মার্কার এজেন্ট বাবুলের গদিতে হামলা চালায়।’
এদিকে কুশপুতুল দাহ প্রসঙ্গে ফেরদৌস আলম এনটিভি অনলাইনকে অভিযোগ করেন, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান ফকিরের নির্বাচন করেন। জনসমর্থন থাকায় বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তাঁর স্ত্রী নাজনিন আলম নির্বাচন করেন। নির্বাচনের পর থেকেই তাঁদের সমর্থকদের ওপর মামলা-হামলা চালিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
গত জুন মাসে তাঁদের সমর্থক মালেক মাস্টারের দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন ফেরদৌস আলম।
অন্যদিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ খান সেলভী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক। এমপি যেসব কর্মকাণ্ড করছেন এগুলো আপনারাও জানেন। তাঁর কর্মকাণ্ড ও ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে সমর্থন না করায় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এ সব করছেন।’
এ প্রসঙ্গে সেলভী আরো বলেন, এমপির নির্দেশে তাঁর সমথর্করা গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনকে দিগম্বর করে রাস্তায় ঘুরিয়েছে, ছাত্রলীগ নেতা সজীবকে কুপিয়েছে, কদিন আগে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক মোরশেদুজ্জামান সেলিমকে তাঁর নির্দেশে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে।