পূজামণ্ডপের সংখ্যা কমিয়ে দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান, না মানলে হত্যার হুমকি

Looks like you've blocked notifications!
ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহিত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া গ্রাম। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে চারটি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। চলতি বছর ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম একটি মাত্র পূজামণ্ডপ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, নির্ধারিত ওই পূজামণ্ডপেই দুর্গাপূজার আয়োজন করতে হবে। অন্যগুলোতে নয়।

ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তাঁর নির্দেশ অমান্যকারীদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে গত ১৭ সেপ্টেম্বর নাওড়া পূর্বপাড়া রায়বাড়ী সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিধান কৃষ্ণ রায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ভারতীয় দূতাবাসের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নিজ এলাকায় আন্ডা রফিক নামে পরিচিত।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘অতি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানাচ্ছি যে, আমি শ্রীবিধান কৃষ্ণ রায়, গ্রাম : নাওড়া, পোস্ট ও থানা রূপগঞ্জ, জেলা : নারায়ণগঞ্জ। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সর্বজনীন দুর্গোৎসব পালনের আকুল ইচ্ছায় পূজা প্রস্তুতি শুরু করেছি। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় এই যে, আমাদের গ্রামের একটি প্রভাবশালী ও স্বার্থান্বেষী মহলের মূল হোতা ভূমিদস্যু রফিকুল ইসলাম ওরফে আন্ডা রফিক ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী গত বছরের ন্যায় এবারও গ্রামের হিন্দু সমাজকে দ্বিধাবিভক্ত করে সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসবকে বন্ধের জন্য সচেষ্ট হয়েছে। আন্ডা রফিক গ্রামের কুচক্রী হিন্দুদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের হিন্দু সমাজকে বিভ্রান্ত করে আমাদের মধ্যে জাতিগত বিভেদ সৃষ্টি করেছে। জনাবের নিকট উল্লেখ্য যে, গত বছর আন্ডা রফিক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের পূজামণ্ডপে এসে হামলা করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে ও প্রতিমা ভাঙচুর করে পূজা বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনা তৎকালীন সকল জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু এই বছর আন্ডা রফিক তাঁর অনুসারীদের নিয়ে শুধুমাত্র একটি পূজামণ্ডপে পূজা করার ঘোষণা দিয়েছে এবং অন্যান্য পূজামণ্ডপে কেউ পূজা উদযাপন করলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। সে একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। তার সাথে সব সময় দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ ছয়-সাতজন গ্যানমান থাকে যারা যে কোনো জায়গায় উপস্থিত হলে মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা দিনেদুপুরে প্রকাশ্যে গুলি চালায় ও হত্যার হুমকি দেয়। গত বছরের ন্যায় সে এবারও আমাদের পূজা ভণ্ডুল ও নিরীহ সংখ্যালঘু গ্রামবাসীর ওপর আক্রমণ করে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য প্রস্তুতিপূর্বক হুমকি দিচ্ছে। যে কোনো অবস্থায় পূজা বন্ধের জন্য হুমকিস্বরূপ সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা নাওড়াবাসী আমাদের সর্বোচ্চ ও সার্বজনীন ধর্মীয় উৎসব উদযাপন ও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রচণ্ড শঙ্কায় দিন  কাটাচ্ছি। তাঁর এহেন কর্মকাণ্ডে আমরা নাওড়াবাসী গত ১৪ সেপ্টেম্বর রূপগঞ্জ থানার সামনে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছি।’   

এই বিষয়ে বিধান কৃষ্ণ রায় এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত বছরের মতো এবারও আন্ডা রফিক আমাদের গ্রামের হিন্দু সমাজকে দ্বিধাবিভক্ত করে সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব বন্ধে পাঁয়তারা করছে। গত বছর আন্ডা রফিক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী পূজামণ্ডপে স্থানীয় সংসদ ও রূপগঞ্জ থানার পুলিশের উপস্থিতিতেই কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে ও প্রতিমা ভাঙচুর করে পূজা বন্ধ করে দেয়। গ্রামের অনেক হিন্দু পরিবারকে নির্যাতন করে গ্রামছাড়া করেছে আন্ডা রফিক। এবারও তেমন পরিস্থিতি তৈরির জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। এবার একটি মাত্র মণ্ডপে পূজা করার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে আন্ডা রফিক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের নির্ধারিত মণ্ডপ ছাড়াও অন্যান্য মণ্ডপে পূজা উদযাপন করলে গ্রামের হিন্দুদের হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে। নিজেদের ঘোষণার ব্যতিক্রম কেউ করলে তাকে হত্যা করতে পিচুপা হয় না তাঁরা। আন্ডা রফিকসহ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা দিনেদুপুরে প্রকাশ্যে গুলি চালায় ও হত্যার হুমকি দেয়।’

কায়েতপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা মানববন্ধন করেছেন। ছবি : সংগৃহীত

বিধান কৃষ্ণ রায় আরো বলেন, ‘পূজা বন্ধের জন্য আন্ডা রফিক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হুমকিস্বরূপ সতর্কবার্তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রূপগঞ্জ থানার সামনে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছে নাওড়াবাসী। এ ছাড়া সব বিষয় উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ভারতীয় দূতাবাসের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।’

এই বিষয়ে নাওড়া পূর্বপাড়া রায়বাড়ী সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সেক্রেটারি কাজল কুমার রায় এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত বছর পূজার অষ্টমীর দিনে রফিকুল ইসলাম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী তাঁর বাড়ির পূজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করে এবং ফাঁকা গুলি চালায়। এরপর তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় আসেন। এক বছর ধরে তিনি প্রাণভয়ে বাড়িতে ফিরে যেতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন। আর এ বছর রফিকুল ইসলাম হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ডেকে বলে দিয়েছে যে শুধু তার নির্ধারিত মহাশ্মশান পূজামণ্ডপেই সবাইকে পূজা পালন করতে হবে। তাদের এলাকায় মোট চারটি পূজামণ্ডপ রয়েছে সেগুলোতে পূজা পালন করতে গেলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে রফিক।’  

কাজল কুমার রায় জানান, গত ১৭ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাঁর বাড়িতে যে পূজামণ্ডপটির কাজ চলছে, সেখানে পুলিশের পাঁচজন সদস্য মোতায়েন করা আছে। কিন্তু তবুও তাঁরা নানা রকমের আতঙ্কে দিন পার করছেন বলে জানান তিনি।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এমন কোনো অভিযোগের বিষয়ে তাঁর জানা নেই। তবে যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সুপারের কাছে এমন অভিযোগ দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁর মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।