হাওরে আকর্ষণীয় নৌকাবাইচ

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নিকলীতে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। ছবি : এনটিভি

কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নিকলীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। নিকলী নতুন বাজার সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটি ও বণিক সমিতির যৌথ আয়োজনে গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলা সদরের বেড়িবাঁধসংলগ্ন সোয়ইজনী নদীতে এ নৌকাবাইচ হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ১০টি দল এ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

আকর্ষণীয় নৌকাবাইচ উপলক্ষে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয় হাওর উপজেলাজুড়ে। সকাল থেকেই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট-বড় নৌকা নিয়ে কিংবা বিভিন্ন যানবাহন ও হেঁটে উৎসাহী দর্শকরা অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হন। শুধু নিকলী নয়, জেলার হাওর-অধ্যুষিত অন্যান্য উপজেলাসহ পাশের নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকেও অনেকে ছুটে আসেন আকর্ষণীয় নৌকাবাইচ দেখতে।

দুপুরের আগেই পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ পুরো বেড়িবাঁধ এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। এ ছাড়া অসংখ্য ভাসমান নৌকায় হাজার হাজার দর্শক অবস্থান নেন। নৌকাবাইচ চলাকালে সারি গান পরিবেশনা ও সেইসঙ্গে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে পুরো এলাকা মুখর হয়ে ওঠে। এ ছাড়া মাঝিমাল্লাদের পরনেও ছিল বাহারি পোশাক।

নৌকাবাইচ আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সদর ইউপির চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপ ও সদস্য সচিব মো. জসিম উদ্দিন জানান, নিকলীর এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো। এই একটি দিনের জন্য হাওরবাসী সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন।

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বোরো ধান কাটা শেষ হলে শুরু হয়ে যায় নৌকাবাইচের প্রস্তুতি। শুরু হয় পুরোনো নৌকা মেরামত ও নতুন নৌকা  তৈরির কাজ। কালের বির্বতনে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক খেলাধুলার মতো নৌকাবাইচ ও হাওরবাসীর স্মৃতি থেকে মুছে যেতে বসেছিল। এর ফলে মাঝখানে কয়েক বছর নিয়মিতভাবে দর্শকপ্রিয় এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। আট বছর ধরে নিকলী উপজেলা প্রশাসন হাওরে হারানো এই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আশ্বিন মাসের কোনো এক দিন নৌকাবাইচের আয়োজন করে আসছে। এবার উপজেলা প্রশাসন এখন উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে নিকলী নতুন বাজার সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটি ও বণিক সমিতি এই নৌকাবাইচের আয়োজন করে।

নৌকাবাইচ আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সদর ইউপির চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়া আহমেদ তুলিপের সভাপতিত্বে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কারার সাইফুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহানা নাসরীন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসহাক ভূইয়া, নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া প্রমুখ।

প্রতিযোগিতায় নিকলী গোবিন্দপুরের আলী হোসেনের দল প্রথম, নিকলীর কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপের দল দ্বিতীয় এবং গুরুই গ্রামের তোতা মিয়ার দল তৃতীয় স্থান অধিকার করে।

প্রতিযোগিতা শেষে প্রধান অতিথিসহ অন্য অতিথিরা প্রথম বিজয়ী দলকে ফ্রিজ এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিজয়ী দলকে একটি করে রঙিন টেলিভিশন পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া পরাজিত প্রতিটি দলকে একটি করে সান্ত্বনা পুরস্কার দেওয়া হয়।