ভৈরবে আওয়ামী লীগ নেতা খুন, আটক ৫

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক ভূঁইয়া (ইনসেটে) হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক পাঁচজন। ছবি : এনটিভি

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক ভূঁইয়া (৫০) দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছেন। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে সাদেকপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত মানিক সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের কিপিংবাড়ির লাল মিয়া ভূঁইয়ার ছেলে।

ভৈরব থানার পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পরে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে আজ সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান এই তথ্য জানিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, নিহত মানিক গতকাল রাত ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার রাজাপুর থেকে নৌকায় করে ফিরছিলেন। মেন্দিপুর খেয়াঘাটে নেমে কিছু দূর আসার পর আগে থেকে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাঁর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। তারা মস্তো মিয়া (২১) ও বাবু মিয়া (১৮) নামের দুজনকে আটক করলেও বাকিরা পালিয়ে যায়।

পরে আটক ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আমান উল্লাহ (৪৫), নূরু মিয়া (৬৫) ও সুমন (৩০) নামে আরো তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।

এলাকাবাসী জানায়, গ্রাম্য আধিপত্য নিয়ে সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের কিপিংবাড়ি ও নূরার বাড়ির লোকজনের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। ওই বিরোধের জেরে গত ছয় মাসে দুই পক্ষ বেশ কয়েকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে কিপিংবাড়ির দুই ব্যক্তি প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন।

মানিক হত্যাকাণ্ডে ঘটনাস্থল থেকে জনতার হাতে আটক মস্তো ও বাবু নূরার বাড়ির সমর্থক বলে জানিয়েছে কিপিংবাড়ির লোকজন। তাদের অভিযোগ, তাদের প্রতিপক্ষ নূরার বাড়ির লোকজনের মদদে মানিককেও খুন করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, সাদেকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় কিপিংবাড়ির নেতা ফজলুর রহমান মাস্টার এবং বিএনপি নেতা নূরারবাড়ির মুসলিম মিয়ার বংশের লোকজনের মধ্যে পূর্বশত্রুতা ও গ্রামের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এরই জের ধরে গত বছরের ৪ ও ৫ নভেম্বর উভয় পক্ষ এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ওই সংঘর্ষে আত্মীয়তা ও গ্রুপিংয়ের সূত্রে রসুলপুরসহ পাশের গ্রাম মৌটুপী, সাদেকপুর, ভবানীপুর ও মেন্দিপুরের লোকজন নূরার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগ দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। ওই ঘটনায় কিপিং বাড়ির অহিদ মিয়া (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিহতসহ উভয় পক্ষের শতাধিক লোক আহত হন। ভাঙচুরসহ অর্ধশত বাড়িঘরে লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনায় নিহত অহিদ মিয়ার ছোট ভাই দুলাল মিয়া বাদী হয়ে নূরার বাড়ির দলনেতা মুসলিম মিয়াকে প্রধান আসামি করে ৩৯ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে গ্রেপ্তার আতঙ্কে নূরার বাড়ির লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই সুযোগে কিপিং বাড়ির লোকজন নূরার বাড়ির সমর্থকদের বাড়ি-ঘরে দফায় দফায় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ করেন নূরার বাড়ির লোকজন।

পরে আদালতের জামিন এবং স্থানীয় মুরুব্বিদের সমন্বয়ে গঠিত শান্তি কমিটির মধ্যস্থতায় নূরার বাড়ির লোকজন নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। কিন্তু উভয় বংশের লোকজন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সেই শান্তি উদ্যোগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলতি বছরের ১১ মার্চ শনিবার দুপুরে আবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরে ১৬ মার্চ ও ৮ এপ্রিল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয় পক্ষ। ৮ এপ্রিলের সংঘর্ষে আবারও কিপিংবাড়ির সমর্থক মোবারক (১৮) নামের এক যুবক নিহত হয়। আহত হয় উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের কমপক্ষের ২৫ থেকে ৩০টি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

এদিকে মানিক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আবার রসুলপুর গ্রামে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন অভিজ্ঞ মহল। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডে কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিপিংবাড়ির নেতা ও সাদেকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, নূরার বাড়ির মদদে তাঁদের সমর্থক ঠকবাড়ি, হাজিবাড়ি, খাঁ বাড়ি ও জুলারবাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে মানিককে হত্যা করেছে। তিনি অপরাধীদের গ্রেপ্তারসহ সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

মানিক হত্যাকাণ্ডে তাঁর বাড়ি ও সমর্থকরা জড়িত নয় বলে জানিয়ে নূরার বাড়ির দলনেতা মুসলেহ উদ্দিন বলেন, ‘গ্রামে ঝগড়ার সময় সমর্থন ও আত্মীয়তার সূত্রসহ নানা কারণে এক বংশ অন্য বংশের সঙ্গে যোগ দেয়। ঝগড়া থেমে গেলে সেই আমেজ কিছুদিন থাকে। পরে আবার যার যার মতো করে চলাচল করেন। আমরা ঝগড়া না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছয় মাস ধরে গ্রামে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছি।’