চোখের জলে নিহত শান্তিরক্ষী জাকিরুলের বিদায়

Looks like you've blocked notifications!
মালিতে নিহত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশি সৈনিক জাকিরুল ইসলামের লাশ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হলে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছবি : এনটিভি

হাজারো মানুষ চোখের জলে বিদায় দিলেন মালিতে নিহত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশি সৈনিক জাকিরুল ইসলামকে। 

আজ রোববার সন্ধ্যায় নেত্রকোনার পূর্বধলার জারিয়া সরকারবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় জাকিরুলের মরদেহ।  

স্মৃতিচারণা করে বড় ভাই নাজমুল আলম সরকার বলছিলেন, ছোটবেলায় খুব ডানপিটে ছিলেন জাকিরুল। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া গ্রামের সরকারবাড়ির সফির উদ্দিনের পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে জাকিরুল ছিলেন সবার ছোট। সংসার সাজাতে একসময় যোগ দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। মিশন থেকে ফিরে কত কিছু করার স্বপ্ন ছিল তাঁর। নাজমুল আলম বললেন, সেই স্বপ্নকে আজ কবরস্থ করা হলো। 

পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০০১ সালের ৩ মে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন জাকিরুল। এরপর বিয়ে করেন ময়মনসিংহের মেয়ে তামান্না সরকারকে। দুই ছেলের জন্ম হয় এই দম্পতির ঘরে। সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি পেয়ে ল্যান্স করপোরাল হন। চলতি বছরের ১৭ মে বাংলাদেশ ছেড়ে আফ্রিকার মালিতে শান্তি রক্ষার কার্যক্রমে যোগ দেন তিনি।

আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর মালিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি সেনা নিহত হন। শান্তিরক্ষীর মরদেহ নিয়ে গতকাল শনিবার তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসেন জাতিসংঘের ফোর্স কমান্ডার মেজর জেনারেল জ্যাঁ-পল ডিকোনিন্ক। 

আজ বিকেলে জাকিরুলের মরদেহ বাড়িতে এসে পৌঁছালে স্বজনরা আহাজারি শুরু করেন। কাঁদছিলেন প্রতিবেশীরাও। 

জাকিরুলের স্ত্রী তামান্নার কণ্ঠে হাহাকার। বারবার প্রশ্ন করছিলেন, ‘কী হবে দুই ছেলের? ওদেরকে মানুষ করবে কে? আমি তো এখনো পড়াশুনা শেষ করিনি। আমি কীভাবে মানুষ করব ওদের? কী হবে আমার? আমাকে কি চাকরি দেবে সরকার?’ 

আদরের ছোট ছেলের মৃত্যুর খবরে নির্বাক বাবা বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না। শোকে বিহ্বল মা-ও।

জাকিরুলের চাচা আবদুর রশিদ সরকারের দাবি, জাকিরুলের স্ত্রীকে যেন সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেন প্রধানমন্ত্রী। 

পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অভি রঞ্জন দেব জানান, ময়মনসিংহ সেনানিবাসের মেজর ফারহাদ আন নাঈমের নেতৃত্বে সেনাসদস্যরা সন্ধ্যায় জারিয়ার সরকারবাড়িতে মরদেহ নিয়ে পৌঁছান। এরপর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।