জীবন বাঁচাতে সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে

Looks like you've blocked notifications!
সাঁতরিয়ে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসা ১১ রোহিঙ্গা যুবক। ছবি : এনটিভি

জীবন বাঁচাতে নাফ নদ সাঁতরিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ১১ রোহিঙ্গা। তাঁরা জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যে থাকা রোহিঙ্গারা এখন অমানবিক অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। তাঁদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ফলে চরম খাদ্য সংকটের মধ্যেও রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার সুযোগ মিলছে না।   

গতকাল বুধবার রাখাইন রাজ্য থেকে সাঁতরে নাফ নদ পেরিয়ে বাংলাদেশে আসা ১১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। তাঁরা হলেন—বুচিডংয়ের সিন্ডং গ্রামের ফয়েজুল ইসলাম (১৭), ইসমাইলপাড়ার হামিদ হোসেন (১৯), কামাল হোসেন (৩০), আনসার উল্লাহ (১৬), হরমুড়াপাড়ার মোহাম্মদ উল্লাহ (২৩), পোহমের ইমাম হোসেন (২২), মো. রিয়াজ (১৯), রমজান আলী (২২), কাইন্দাপাড়ার সৈয়দ হোসেন (৩০), আজলীপাড়ার মো. আরফ (১৮) ও টারমপাড়ার আবদুল মতলব (২৮)।

যুবকরা জানান, গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় তাঁরা নাইক্ষ্যংদিয়ায় জড়ো হয়েছিলেন নৌকায় করে বাংলাদেশে আসার জন্য। এর আগে তাঁরা টানা আট দিন হেঁটেছেন। বাড়ি থেকে যে খাবার নিয়ে পথ দিয়েছিলেন, তা তিন দিনেই ফুরিয়ে যায়। 

নদীর পারে এলেও তাঁরা কোনো যানবাহন পাননি। সীমান্তে এখন রোহিঙ্গা পারাপারে ব্যাপক কড়াকড়ি। তাই নদ পারাপারে বাহন মিলছে না রোহিঙ্গাদের। উপায় না দেখে ১১ যুবক ঝাঁপ দিলেন নাফ নদে। সবার হাতে একটি ছোট তেলের শূন্য জারিকেন ছিল। তাতে ভেসে প্রায় আড়াই ঘণ্টা নাফ নদে সাঁতার কেটে শাহপরীর দ্বীপ জেটির কাছাকাছি চলে আসেন। বিষয়টি নাফ নদে টহলরত কোস্টগার্ডের নজরে এলে তাঁদের উদ্ধার করে নিজেদের ট্রলারে নিয়ে কূলে তুলে নিয়ে আসেৱ।

কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. জাফর ইমাম সজীব বলেন, মিয়ানমার থেকে ১১ রোহিঙ্গা যুবক সাঁতার কেটে নাফ নদের শাহপরীর দ্বীপ জেটির দিকে অগ্রসর হলে টহলরত কোস্টগার্ড সদস্যদের নজরে পড়ে। কোস্টগার্ড দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে কূলে নিয়ে আসে এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানোর জন্য স্থানীয় বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে।

শাহপরীর দ্বীপ বিওপি বিজিবি উদ্ধার হওয়া ১১ রোহিঙ্গাকে বিকেলে সাবরাং হারিয়াখালী অস্থায়ী ত্রাণ বিতরণ ক্যাম্পে পাঠায়। এ সময় কথা হয় ১১ রোহিঙ্গা যুবকের সঙ্গে। 

রাখাইনের বুচিডংয়ের ইসমাইলপাড়ার রোহিঙ্গা যুবক কামাল হোসেন (৩০) বলেন, ‘আমরা সাত দিন আগে ঘর থেকে বের হয়েছি বাংলাদেশ আসতে। কিন্তু হঠাৎ করে মিয়ানমার সেনারা আমাদের পালাতেও বাধা দিচ্ছে, শান্তিতেও থাকতে দিচ্ছে না। ঘরবাড়ি থেকে আমরা বের হতে পারছিলাম না। আমাদের ঘরবাড়িতে খাবারও মজুদ নেই। এপারে পালিয়ে না এলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। সেনারা কোনো নৌকা নামতে দিচ্ছে না, এপারেও নাকি এখন অনেক কড়াকড়ি। তাই রোহিঙ্গারা আসার জন্য কোনো বাহন পাচ্ছে না। সাহস করে আমরা সাঁতার কেটে চলে এলাম।’

কাইন্দাপাড়ার সৈয়দ হোসেন (৩০) বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা সাঁতার দিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। আমাদের মা, বোন, স্ত্রী-সন্তানরা ওপারে রয়ে গেছে। আমাদের রাখাইনে থাকাতে চরম ঝুঁকি রয়েছে। তাই আপাতত পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসছি। কিন্তু সীমান্তের কড়া পাহারা এবং রোহিঙ্গাদের আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা ওপারে আটকে আছে। আমরা সেই বার্তাটি দিতে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সাঁতার কেটে নাফ নদ পাড়ি দিয়েছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি মেম্বার আবদুস সালাম বলেন, ‘বুধবার সকালে আমরা নাফ নদের তীর থেকে কয়েকজনকে মাঝনদে সাঁতার কাটতে দেখি। সবাই সাঁতার দিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসছিলেন। তবে প্রত্যেকের হাতে একটি করে ছোট জারিকেন ছিল। তারা সবাই নিরাপদে এপারে উঠেছেন।’

রাখাইনে সহিংসতার পর থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ আসতে গিয়ে এ পর্যন্ত নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরে অন্তত ১৬৬ রোহিঙ্গার প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।