‘দুইবার অপারেশন পিছাইছে, জানি না আর কতবার’

Looks like you've blocked notifications!

ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের অস্ত্রোপচারের তারিখ নির্ধারণের পরও চিকিৎসকরা তা বারবার পিছিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। তাঁদের দাবি, তারিখ পেছানোর ফলে অযথাই সপ্তাহের পর সপ্তাহ  হাসপাতালে কাটাতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত অর্থ খরচসহ পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি।

রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন শিশু রোগীর স্বজন এনটিভি অনলাইনের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তাঁদের কিছুই করার নেই। অস্ত্রোপচার কত সপ্তাহ পেছাবে, সেটা চিকিৎসকরা ঠিক করে দেন। রোগীর স্বজন শুধু টাকা খরচ করছে আর চেয়ে চেয়ে দেখছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল থেকে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় দেড় বছর বয়সী শিশু আবদুল্লাহকে। হাসপাতালে আসার পর অস্ত্রোপচারের জন্য টাকা জমা দেন তার মা  রিমা খাতুন। এর পর তিন দফা পিছিয়েছে আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার।

রিমা খাতুন এনটিভি অনলাইনকে জানান, এখানকার দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে আবদুল্লার জ্বর-সর্দি হওয়ায় প্রথম দিন অস্ত্রোপচার করেননি চিকিৎসক। এর পরের সপ্তাহে অস্ত্রোপচার করানোর দিন একজন চিকিৎসক বলেন, ‘আজ অনেক ইমার্জেন্সির রোগী আছে। আপনারটা আগামী সপ্তাহে হবে।’

রিমা আরো বলেন, ‘পরের সপ্তাহে, অর্থাৎ গত রোববার অস্ত্রোপচারের দিন চিকিৎসক বলেন, অপারেশন করার সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছে বলে আজ আর হবে না। আগামী মঙ্গলবার করতে হবে।’

আবদুল্লাহর মতো ভুক্তভোগী আরেক শিশু এক বছর বয়সী জুয়েল। শিশু হাসপাতালে ভর্তির পর আবদুল্লাহ পাশের শয্যাতেই ছিল শিশুটি। তার অস্ত্রোপচার নিয়ে মা নাসিমা বেগমও একই ধরনের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, জুয়েলের অস্ত্রোপচারের তারিখও তিনবার পরিবর্তন হয়েছে।

‘আবদুল্লাহর সঙ্গে সঙ্গেই জুয়েলের অপারেশনের তারিখ পড়ত। শেষে একসঙ্গে তিন সপ্তাহ পরে দুজনেরই অপারেশন হয়’, বলেন নাসিমা।

‘এই অপারেশন বারবার পেছানো নিয়া একজন মহিলা ডাক্তারদের সঙ্গে গণ্ডগোল করছিল। তার পরে নাকি সেই মহিলার মেয়ের ১০ বার অপারেশন করা লাগছিল!’, যোগ করেন নাসিমা।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা থেকে এসে দ্বিতীয়বারের মতো শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় হয় মীম (২) নামের এক শিশুকে। তার খালা জ্যোৎস্না আক্তারের অভিযোগ, একেবারেই বিনা কারণে অস্ত্রোপচার আটকে রেখেছিলেন চিকিৎসক।

জ্যোৎস্না খাতুন এনটিভি অনলাইনকে জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসকরা তাঁদের কাছে আগের রিপোর্ট দেখতে চান। কিন্তু আগেরবার হাসপাতাল ছাড়ার সময় তাঁদের হাতে রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। এর পর তিনি হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের কাছে গিয়ে রিপোর্ট চান। কিন্তু হাসপাতাল নাকি ওই রিপোর্ট খুঁজে পাচ্ছিল না!

জ্যোৎস্না আরো জানান, রিপোর্ট খুঁজতে খুঁজতে হাসপাতালের দায়িত্বরতরা আট দিন লাগিয়ে দেয়। এর পর পূজার ছুটি শুরু হয়ে যায়। আর এতে দেরি হয় অস্ত্রোপচারের। ১৬ দিন পর অস্ত্রোপচার হয় মীমের।

শাহাদাত (ছয় মাস) নামের এক শিশুর মা কেয়া বলেন, ‘এই পর্যন্ত দুইবার অপারেশন পিছাইছে। জানি না আরো কতবার পিছাবে। মাঝে মাঝে মনে হয়, এখান থেকে অন্য হাসপাতালে চলে যাই। কিন্তু এরা তো যেতে দেবে না।’

কেয়া আরো বলেন, “অপারেশনের তারিখ দেন ডাক্তাররা। ডাক্তারের নির্দেশেই অপারেশনের একদিন আগে বাচ্চার খাবার বন্ধ করে দিই আমরা। এর পরে অপারেশনের সময় এলো। অপারেশনের জন্য সব প্রস্তুতিই শেষ। ঠিক এমন সময় যদি ডাক্তার বলে যে ‘আজ আর অপারেশন হবে না’, তখন কেমন লাগে? মনে হয় কড়া ভাষায় কিছু বলি ডাক্তারদের! কিন্তু এরা যদি বাচ্চার কোনো সমস্যা করে এই জন্য কিছু বলতে পারি না।”

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালটির উপপরিচালক ডা. এইচ এস কে আলম বলেন, তিনি লিখিত অভিযোগ ছাড়া মৌখিক কিছু শুনতে চান না।

‘এমন যদি হয়ে থাকে তবে তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। তার পর আমরা অনুসন্ধান করে দেখব, কী কারণে এমনটি হয়েছে’, বলেন আলম।

হাসপাতালটির পরিচালক মানজুর হুসাইন বলেন, ‘আপনি যেহেতু অভিযোগের কথা আমাকে জানিয়েছেন, সেহেতু আমি দেখব, আসলে কী হয়েছে বা কেন হয়েছে। তবে যদি বিনা কারণে এমনটি হয়ে থাকে, সেটা তো হাসপাতালের জন্যই খারাপ দিক।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) কাজী জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এটা তো হাসপাতালের ব্যাপার। কীভাবে তারা কী করবে, সেটা হাসপাতালই ঠিক করবে। তবে আমি শিশু হাসপাতালের গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবে আছি। আগামী মিটিংয়ে এই বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলব।’