বৃদ্ধা মাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করল ছেলে!

Looks like you've blocked notifications!
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছেলের নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধা শরিফনের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখছেন চিকিৎসক। ছবি : এনটিভি

বৃদ্ধা মায়ের ভিটে-বাড়ির শেষ সম্বল তিন শতক জমি নিজের করে নিতে না পেরে তাঁকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে এক ছেলে। গুরুতর আহত ওই মা এখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের শয্যায়।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুতারপাড়া গ্রামে।

শুক্রবার গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে খবর পেয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ওই বৃদ্ধা মাকে দেখতে যান এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। পরে বোদা থানান পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

সরেজমিনে জানা যায়, বোদা সদর ইউনিয়নের সুতারপাড়া এলাকার শরিফন (৭০) নামের ওই বৃদ্ধা ও তাঁর বৃদ্ধ স্বামী আবদুর রাজ্জাক অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করেন। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। স্বামী সহজ-সরল প্রকৃতির হওয়ায় মেয়েজামাইদের সহযোগিতায় ও অন্যের বাড়িতে কাজ-কর্ম করে নিজেই সংসার চালান ওই বৃদ্ধা। বড় ছেলে আশরাফুল বিয়ে করে অন্যত্র বাড়ি করেছেন। নিজের তিন শতক ভিটেমাটিতে ছোট ছেলে আইজুল ইসলামসহ এক সঙ্গে বাস করলেও স্বামীকে নিয়ে আলাদা খেতেন ওই বৃদ্ধা। অনেক কষ্টে ছোট ছেলের সুখের জন্য আড়াই বিঘা জমিও দিয়েছেন তাকে। তারপরও ছোট ছেলের মন পাননি তিনি। অবশেষে তাঁর নামে থাকা তিন শতক জমির মধ্যে দুই শতক নিজের করে নিতে পর্চা কেটে নেন ছোট ছেলে অটোভ্যানচালক আইজুল ইসলাম। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে মাঝেমধ্যেই ঝগড়া হচ্ছিল মা-ছেলে ও বৌমা ইতির সঙ্গে। অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মায়ের সঙ্গে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তাঁকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন আইজুল। এতে মায়ের হাত কেটে গিয়ে রক্তাক্ত হন। ছেলের এমন পিটুনি সহ্য করতে না পেরে রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন শরিফন। একপর্যায়ে বাড়ির পাশের একটি দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেন তিনি। পরে সেখান থেকে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

বৃদ্ধা ওই মায়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁর ছোট ছেলে আইজুলকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বৃদ্ধা মা শরিফন বলেন, ‘আমার বড় ছেলে আশরাফুলকে আমি কিছুই দিতে পারিনি। সে অন্যত্র বাড়ি করেছে। আমার বাড়িতেই ছোট ছেলে তার বৌ-বাচ্চা নিয়ে আলাদা খায়। তাদের সুখের জন্য অনেক কষ্ট করে আড়াই বিঘা জমি দিয়েছি। তারপরও সে আমার তিন শতক জমির মধ্যে দুই শতকের পর্চা কেটে নিয়েছে। এর আগেও সে আমাকে তিনবার মেরেছে। কোনো সন্তান কি তার মাকে এভাবে মারতে পারে?’

শরিফনদের প্রতিবেশী দোকানদার মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দোকানেই বসে ছিলাম। এ সময় বুড়িটা হাঁপাতে হাঁপাতে আমার দোকনের সামনে এসে মাটিতে বসে পড়েন। আমি তখন একটা চেয়ারে বসতে দেই। তারপর দেখি তাঁর হাত থেকে রক্ত ঝরছে। পরে আমি তাঁকে একটা বিস্কুট খেতে দেই। কিন্তু তিনি আমার কাছে পানি চাচ্ছিলেন। পরে কয়েকজন মিলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. জাকিয়া আক্তার বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই বৃদ্ধা মাকে তাঁর মেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং হাতে রক্ত ঝরছিল। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং এখন আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন।

বোদা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মানিক বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনে হাসপাতালে ওই মাকে দেখতে যাই এবং চিকিৎসার খোঁজখবর নিই। বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এ ধরনের পাষণ্ড ছেলেকে বিচারের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করি এবং আমি নিজেও হাসপাতালে গিয়ে বৃদ্ধা মায়ের খোঁজখবর নিয়ে আসি। এ ছাড়া তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে (আরএমও) নির্দেশ দিয়েছি।’