কুড়িগ্রামে জমির আইলে সুগন্ধি তেজপাতার চাষ
কুড়িগ্রামে বিভিন্ন ফসল চাষের পাশাপাশি জমির আইলে পরিবেশবান্ধব সুগন্ধী তেজপাতা চাষ এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জেলার ছিনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সাদেকুল হক নুরু চাষ করেছেন এই তেজপাতা।
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, সাদেকুল হক সাড়ে ১২ একর জমির আইলে সাত শতাধিক তেজপাতা লাগিয়েছেন। সেখান থেকে তিনি বছরে আয় করছেন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। তাঁর দেখাদেখি লোকজন বাসাবাড়িতেও লাগাচ্ছে এই তেজপাতার চারা।
সাদেকুল হক নুরু জানান, ২০১৩ সালে বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ছিনাই ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে ১০ একর জমির আইলে পাঁচ শতাধিক তেজপাতার চারা লাগিয়েছেন। চারা রোপন পর্যন্ত তাঁর ১৫০ টাকা খরচ হয়েছে। লাগানোর সময় পটাশ, ডিআইবি ও ব্রিফার কীটনাশক স্প্রে করার পর আর কোনো খরচ নেই। এক বছর পর প্রথম ১০ হাজার টাকায় পাতা বিক্রি করেন। এরপর গাছগুলো বড় হয়ে যায় ও লতাপাতা বেড়ে যায়। ফলে আয়ও বাড়তে থাকে। বছরে দুবার তেজপাতা বিক্রি করা যায়। গাছের কুচি পাতা বের হওয়া শেষ হলেই বিক্রি শুরু হয়ে যায়। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে পাতা কিনে নিয়ে যায়।
সাদেকুল আরো জানান, জমির আইলে তেজপাতা চাষের পাশাপাশি জমিতে তিনি ধান, আলু, ভুট্টা ও সবজি চাষ করেছেন। এতে ফলনের কোনো ক্ষতি হয় না। গত বছর তিনি আরও আড়াই একর জমির আইলে নতুন করে তেজপাতার চারা লাগিয়েছেন। গাছ বড় হলে একরে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। একবার গাছ রোপণ করলেই হয়। রোপন করার কিছুদিন পর থেকেই তেজপাতা বাড়তে থাকে। শুধু বছরে দু’বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়।
ওই এলাকার রেহেনা ও জোলেখা জানান, সাদেকুলের দেখে তাঁরা বাড়ির মধ্যে তেজপাতা লাগিয়েছেন। প্রতি বছরে তেজপাতা বিক্রি করছে অনেক টাকা পাচ্ছেন।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন জানান, তেজপাতা পাহাড়ি এলাকার গাছ। এটি জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। লম্বায় ১৫ থেকে ১৬ মিটার উঁচু হয়। রান্নায় স্বাদ ও সুগন্ধি আনতে তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। এ ছাড়াও এর রয়েছে ঔষধী গুণাগুণ। শরীরে ত্বকের সতেজতা ফিরিয়ে আনতে, কোলেস্টরেল মাত্রা কমাতে ও হ্নদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
নাসির উদ্দিন আরো জানান, শরীরের নানা রোগ সারিয়ে তুলতেও তেজপাতার গুণাগুণ অসাধারণ। ঠাণ্ডাজনিত বা উচ্চভাষজনিত গলা ভাঙা রোগ সারাতে তেজপাতার রসের রয়েছে অসাধারণ ওষুধি গুনাগুণ। এটি চিরশ্যামল ও গাছটি বসতবাড়ির শোভাও বৃদ্ধি করে। দেশে মোট মসলার চাহিদা ৩১ লাখ টন। উৎপাদন হয় ১৭ লাখ টন। ঘাটতি প্রায় অর্ধেক। ফলে প্রতিবছর আড়াই হাজার কোটি টাকার মসলা আমদানি করতে হয়। যা জমির আইলে চাষ করে ঘাটতি মেটানো সম্ভব।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, ‘এ উপজেলায় মানুষের দ্রুত বর্ধনশীল ইউক্যালিপ্টাস গাছ লাগানোর প্রবণতা বেশি। তার পরিবর্তে আমরা তেজপাতা গাছ লাগাতে মানুষকে উৎসাহিত করছি। তারই অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত ২০ জন চাষী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেজপাতা চাষে এগিয়ে এসেছে। এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা লাভবান হবেন ও ইউক্যালিপ্টাস গাছের পরিবর্তে তেজপাতা চাষে আগ্রহ বাড়বে।’