পঞ্চগড়ে মহিলা আওয়ামী লীগে হাতাহাতি, তিন নেত্রী আহত
পঞ্চগড় জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার স্থানীয় সরকারি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কর্মী সমাবেশে ওই ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় তিন নেত্রী আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য রেবেকা সুলতানা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পঞ্চগড় পৌরসভার কাউন্সিলর কে এ দিলখুশা প্রধান বিপ্লবী ও নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া খাতুন। আহতদের প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিলখুশা প্রধান বিপ্লবীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে।
জানা যায়, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদকে কেন্দ্র করে কিছুদিন থেকে অসন্তোষ বিরাজ করছিল।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আশরাফুন নেছা মোশাররফ ও সাধারণ সম্পাদক পিনু খান পঞ্চগড় জেলা কমিটির সভাপতি পদে রেজিয়া ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে কে এ দিলখুশা প্রধান বিপ্লবীকে মনোনীত করেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই কমিটি অনুমোদন পায়। কিন্তু বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহামুদা বেগম পঞ্চগড় জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জাকিয়া খাতুনকে দায়িত্ব দেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দিলখুশা প্রধান বিপ্লবী ও জাকিয়া খাতুন দুজনই পরিচয় দেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত কর্মিসভায় জাকিয়া খাতুনের নাম সংবলিত ব্যানার লাগানোয় বিপ্লবীর কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেত্রীরাও হাতাহাতিতে অংশ নেন। কর্মী সমাবেশ শুরু হলে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম রেজিয়া ইসলামকে সভাপতি ও জাকিয়া খাতুনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। মুহূর্তের মধ্যেই সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ছোটাছুটি করে পালাতে থাকে। এ সময় রেবেকা সুলতানাসহ তিন নেত্রী আহত হন।
পুলিশ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের অপর সাধারণ সম্পাদক কে এ দিলখুশা প্রধান বিপ্লবীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে পুলিশ পাহারায় বিপ্লবীকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।
আজ রোববার বিকেলে মোবাইল ফোনে কে এ দিলখুশা প্রধান বিপ্লবী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের বিশাল একটি দল কর্মিসভা করতে না এসে তাঁরা পঞ্চগড়ে ঘুরতে আসেন। সকাল থেকে মহিলা কর্মীদের সভায় নিয়ে এসে শেষ বিকেলে তাঁরা সভায় যোগ দেন। মহিলা কর্মী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আমাদের কারো সঙ্গে কথা না বলে তাঁরা সভায় যোগ দিয়ে কমিটি ঘোষণা করেন। এ সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।’
দিলখুশা আরো বলেন, ‘কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহামুদা বেগম ১০ লাখ টাকা, বিমানে যাতায়াতের টিকেটসহ বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ অনুমোদিত কমিটি বাতিল না করে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জাকিয়া খাতুনের নাম অনুমোদন করে পাঠান।’
পঞ্চগড় জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া খাতুন আহত বিপ্লবীর সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সাফিয়া খাতুন ও মাহামুদা বেগম বিক্রি হওয়ার মতো নেত্রী নন। কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটি পঞ্চগড়সহ চারটি জেলার মহিলা আওয়ামী লীগের পকেট কমিটি গঠন করেছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মহিলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটি আগের কেন্দ্রীয় কমিটির গঠন করা জেলা পর্যায়ের পকেট কমিটিগুলো বাতিল করেন।’
পঞ্চগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল হাসান সরকার জানান, কর্মী সমাবেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে দিলখুশা প্রধান বিপ্লবী পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। পুলিশি হেফাজতে তাঁকে চিকিৎসার জন্য রংপুরে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রেবেকা সুলতানা বাদী হয়ে দিলখুশা প্রধান বিপ্লবীকে আসামি করে পঞ্চগড় থানায় মারধরের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন।