শেষ পর্যন্ত দুলাভাইয়ের কাছেই হারতে হলো মালাকে

Looks like you've blocked notifications!
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কলাপাড়া মেনহাজ উদ্দীন বিশ্বাস কলেজের ছাত্রী মালা আক্তার। ছবি : সংগৃহীত

জন্মের পর বাবাকে কাছে পায়নি। মামার বাড়িতে থেকেছে, পড়াশোনা করেছে। পরে মাও আরেকটি বিয়ে করে চলে যায় দূরে। এ বাড়ি, ও বাড়ি থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হয়েছিল কলেজে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুলাভাইয়ের কাছে হারতে হলো কলেজছাত্রী মালা আক্তারকে (১৭)। গতকাল মঙ্গলবার বরগুনার আমতলী উপজেলার হাসপাতাল সড়কের একটি বাড়িতে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। গলা কেটে হত্যার পর শরীর সাত টুকরো করা হয়। এরপর লাশ গুম করতে মৃতদেহ দুটি ড্রামে ভরা হয়।

এসব কথা স্বীকার করে আজ বুধবার দুপুরে বরগুনার আমতলীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মালার ফুফাতো বোনের স্বামী আলমগীর হোসেন পলাশ। পলাশ বরগুনার ঘটবাড়িয়া আদর্শ কলেজের প্রভাষক।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে মালা আক্তারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আজ তার লাশ নিতে হাসপাতালে যান মা আকলিমা বেগম ও মামা মো. হাবিব খান। বিকেল সাড়ে ৩টায় মালার জানাজা হয়। দাফন হয় বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের পূর্ব গদিঘাটা গ্রামের নানাবাড়িতে।

মালার মামা মো. হাবিব খান জানান, মালা গর্ভে থাকা অবস্থায় তার বাবা মো. আবদুল মান্নান মালার মাকে তালাক দেন। এর পর থেকে তিনি মালার মাকে দেখাশোনা করেন। মালার জন্মের পর প্রায় ১৩ বছর পর্যন্ত তিনি মালাকে লালন-পালন করেন। মালার মা আকলিমা বেগমকে ঢাকায় এক শ্রমিকের সঙ্গে আবার বিয়ে দেন। সেখানে আকলিমা বেগমের পাঁচ বছর বয়সী আরো একটি মেয়ে রয়েছে।

মালার মামা আরো বলেন, দুই বছর আগে তিনি মালাকে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে পরিবার পরিজন নিয়ে তিনিও ঢাকায় চলে যান। এর পর থেকেই বাবাহারা মালার সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। কখনো এ স্বজন, কখনো ও স্বজনের বাসায় থেকে এসএসসি পাস করে মালা। পরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কলাপাড়া মেনহাজ উদ্দীন বিশ্বাস কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় মালা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একপর্যায়ে মালা ও তার পরিবারের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন পলাশের সঙ্গে প্রায় ১৫ বছর আগে মালার ফুফাতো বোন মেরির বিয়ে হয়। পলাশ বর্তমানে বরগুনার ঘটবাড়িয়া আদর্শ কলেজের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। মালা তার ফুফাতো বোন মেরির বাসায় মাঝেমধ্যে বেড়াতে যেত। তখন দুলাভাই পলাশের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাদের সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। পরে গত ২২ অক্টোবর পলাশ মালাকে নিয়ে তাঁর ভাগ্নিজামাই আমতলীর হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মাইনুল আহসান বিপ্লবের বাসায় যান। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওই বাসায় তিনি গলা কেটে মালাকে হত্যা করেন। এরপর মৃতদেহ সাত টুকরো করে দুটি ড্রামে ভরে লুকানোর চেষ্টা করেন পলাশ ও তাঁর সহযোগীরা।

বরগুনায় কলেজছাত্রী মালা আক্তারের মা আকলিমা বেগমের আহাজারি। ছবি : এনটিভি

পরে খবর পেয়ে বিকেল ৪টার দিকে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে পলাশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় দুটি ড্রাম থেকে মালার সাত টুকরো মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে পলাশের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাঁকে সহযোগিতা করার অভিযোগে ওই বাসার মালিক অ্যাডভোকেট মাইনুল আহসান বিপ্লবকেও গ্রেপ্তার পরে পুলিশ।

এ ঘটনায় আমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নুরুল ইসলাম বাদল বাদী হয়ে মো. আলমগীর হোসেন পলাশ ও অ্যাডভোকেট মাইনুল আহসান বিপ্লবের বিরুদ্ধে হত্যা ও মৃতদেহ লুকানোর অভিযোগে একটি মামলা করেন।

মামলার অপর আসামি পলাশের ভাগ্নিজামাই অ্যাডভোকেট মাইনুল আহসান বিপ্লবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। পরে উভয়কেই জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক মো. হুমায়ূন কবীর।

আদালতে পলাশের স্বীকারোক্তি সম্পর্কে বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক জানান, পলাশকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। একই সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডে আইনজীবী মাইনুল আহসান বিপ্লব তাঁকে সহায়তা করেছেন বলেন পুলিশকে জানান তিনি। এরপর বিপ্লবকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে পলাশকে আরো যাঁরা সহযোগিতা করেছেন তাঁদের নামও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন পলাশ। এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

বিজয় বসাক জানান, মালার মৃতদেহ থেকে যাতে দ্রুত দুর্গন্ধ ছড়াতে না পারে, সে জন্য হত্যাকাণ্ডের পর মৃতদেহের টুকরোগুলো ড্রামে ভরার আগে পানি দিয়ে মৃতদেহের প্রতিটি টুকরো ভালোভাবে ধুয়ে রক্ত দূর করে খুনিরা।