সাতক্ষীরায় পানিবন্দি দেড় শতাধিক গ্রামের মানুষ

Looks like you've blocked notifications!
সাতক্ষীরার তালা উপজেলা সদরে জমে আছে পানি। ছবি : ফোকাস বাংলা

অবিরাম বর্ষণের সঙ্গে কপোতাক্ষ ও বেতনা নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা সদর, তালা ও কলারোয়া উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম। পানির তোড়ে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এ ছাড়া সাতক্ষীরার ভোমরা কাস্টমস অফিস ও স্থলবন্দরের একাংশ পানিতে ডুবে আছে। খাল-বিল, শতাধিক মাছের ঘের উপচে পানি ঢুকে পড়েছে গ্রামে গ্রামে। এ অবস্থায় নিজেদের সহায় সম্বল রক্ষায় এলাকার মানুষ কাঁচা ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছেন। বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে সাতক্ষীরা শহরের নিম্নাঞ্চল। ডুবে গেছে শত শত একর জমির আমন বীজতলা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির ক্ষেত। 

দুর্যোগপূর্ণ এই পরিস্থিতিতে তালা উপজেলার ৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রণব কুমার মল্লিক জানান, রাঁঢ়িপাড়া, সম্বলডাঙ্গা, খরাইল, উত্তর ঘোনা, গঙ্গারামপুর, শালিকা, টিকারামপুর, গোপালডাঙ্গা, আলাদিপুর, নগরঘাটা, গাবতলী, কৃষ্ণনগর, দক্ষিণ সাহাপুর, দোহার পশ্চিম, কলাগাছি, কুলপোতা, খলিলনগর, রায়পুর, পার মাদরা, বিতায়ন, পারকৈখালীসহ  উপজেলার ২১০টি স্কুল পানিতে ডুবে আছে। 

রাঁঢ়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিখা রানী চৌধুরী জানান, তাঁর বিদ্যালয়ের সবগুলো ভবন এখন চার থেকে পাঁচ ফুট পানির নিচে। ফলে বিদ্যালয়ে আগামী ৩ আগস্ট অনুষ্ঠেয় পরীক্ষা নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি। 

তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনদ কুমার জানান, পানিতে তালা উপজেলা পরিষদ তলিয়ে গেছে। পরিষদের বেশির ভাগ সরকারি কার্যালয়ও পানির নিচে রয়েছে। কপোতাক্ষতীরের সব গ্রামই এখন পানিতে সয়লাব বলে জানান তিনি। পানির কারণে তালা-পাইকগাছা সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

এদিকে কলারোয়ার কপোতাক্ষতীরের চারটি ইউনিয়নের সবগুলো গ্রাম পানিতে সয়লাব হয়ে আছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন। তিনি জানান, উপজেলার বেতনা নদী, সীমান্তের সোনাই নদী ও ইছামতি নদী উপচে পানি ঢুকেছে গ্রামে গ্রামে। ফলে এসব এলাকার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। 

সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহনাজ পারভীন মিলি জানান, শাল্যের বিল ও ডাইয়ের বিলসহ ১০টি বিল এখন বেতনা নদীর পানির নিচে। সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা, বল্লী, বেনেরপোতা, রাজনগর, লাবসাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলোও পানিতে সয়লাব। পানিনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হয়ে গতকাল শুক্রবার সারা দিন ও আজ শনিবার দিনভর বিরামহীন বৃষ্টির ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পানি অপসারণের দাবিতে আজ সাতক্ষীরার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয় ঘেরাও করে এলাকাবাসী। অবিলম্বে পানি অপসারণ না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, কেবল তালায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিন হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া কলারোয়ায় দেড় হাজার পরিবার পানবন্দি হয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।