বাঁধ ভেঙে সাতক্ষীরায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
টানা বৃষ্টির পাশাপাশি কপোতাক্ষ নদ, বেতনা ও ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন ধরায় সাতক্ষীরায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত এলাকার বন্যার পানি প্রচণ্ড চাপ দিয়েছে কুশখালী সীমান্তের খইতলা বাঁধের ওপর। এতে এ এলাকা দিয়ে ২০০০ সালের মতো আবারও পশ্চিমবঙ্গের পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি ব্যবস্থা নিলেও টানা বৃষ্টির কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে।
আজ রোববার সকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির নেতৃত্বে দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) ও সদস্যরা নিজ নিজ এলাকার বন্যা পরিস্থিতির বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন।
সভায় বক্তারা জানান, বৃষ্টি বাড়তে থাকলে আরো ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হবে। এর আগে ভাঙন পয়েন্টগুলো রোধ করা জরুরি। ভারত থেকে আসা পানি ঢুকে পড়তে পারে এই আশঙ্কায় খইতলা বাঁধ এলাকায় পাউবো ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধিরা পৌঁছে গেছেন বলে সভায় জানানো হয়।
সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৪০টি গ্রাম পানির নিচে আছে। আরো ২৫টি গ্রাম আংশিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়ন আশ্রয়কেন্দ্রে বেশ কিছু মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। নদী ও খালে দেওয়া সব ধরনের জাল ও বাঁশের চাটাইয়ের পাটা অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে।
সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, ‘পাউবোর অবহেলা ও অদূরদর্শিতার কারণে সাতক্ষীরা জেলা দিন দিন জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে কাজ করার নিয়ম থাকলেও তখন না করে বৃষ্টি ও বন্যা এলেই তারা তৎপর হয়ে ওঠে।’ এতে কোনো লাভ হয় না উল্লেখ করে মোস্তাক বলেন, পাউবোকে যথাসময়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সভায় জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল আহসান বলেন, পানিনিষ্কাশনের সব বাধা দূর করতে খাল-বিল পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সব সরকারি খাস খাল বন্দোবস্ত নিয়ে মাছ চাষের জন্য পানি আটকে রাখা হচ্ছে। সেগুলো বাতিল করা হবে বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।
সভায় আরো বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের প্রশাসক মুনছুর আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মীর মোদাচ্ছের হোসেন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আবদুল সাদী, পৌরসভার মেয়র এম এ জলিল, জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম ও গোলাম মোরশেদ, ১৪টি ইউপির চেয়ারম্যান, পাউবোর ১ ও ২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হামিদ ও আবদুল মালেক এবং বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা ছিলেন।
ভেঙে গেছে চাকলা বেড়িবাঁধ
জেলার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা বেড়িবাঁধ গতকাল শনিবার রাতে আবারও ভেঙে কপোতাক্ষ নদের পানিতে তলিয়ে গেছে চাকলা গ্রাম। একই সঙ্গে ২০০ চিংড়িঘেরের পানি নদের পানির সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। ওই ইউপির চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ‘গত বছরের ২২ এপ্রিল এই বাঁধ সংস্কারে পাউবো টাকা বরাদ্দ পায়। অথচ এই টাকা কোনোভাবেই ব্যবহার না করে ফেলে রাখা হয়। এবার আবারও বাঁধ ভেঙে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। আশাশুনির জেলেখালী দয়ারঘাট, চুইবাড়িয়া ও সুভদ্রাকাটি এলাকায় ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সাতক্ষীরার পশ্চিম সীমান্ত ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা দেবহাটা ও কালীগঞ্জ এলাকায় ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধের সুশীলগাতি পয়েন্ট ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তালা ও কলারোয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
তালা ও কলারোয়া উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় কপোতাক্ষ নদ ও বেতনা নদী উপচে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে গেছে। দুই উপজেলায় ৫৫টি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ ও বেশির ভাগ সরকারি কার্যালয় প্লাবিত হয়েছে। কয়েকটি স্লুইসগেট উপচে বিভিন্ন বিলে ও গ্রামে কপোতাক্ষ নদের পানি প্রবেশ করায় বীজতলা ও সব ধরনের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তালা উপজেলার প্রায় ৮০টি গ্রামের এক লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা পৌর এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ড বেতনা নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। যানবাহন চলাচল ছাড়াও সাধারণ মানুষের যাতায়াতও বিঘ্নিত হচ্ছে। ডাইয়ের বিল দিয়ে পানি অপসারণ না হওয়ায় বল্লী, লাবসা, ধূলিহর, ব্রহ্মরাজপুর ও সাতক্ষীরা পৌরসভার পানি বের হওয়ার কোনো পথ নেই।
হুমকিতে আছে শ্যামনগর উপজেলার ঘূর্ণিঝড় আইলা উপদ্রুত দুটি দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও পদ্মপুকুর। এসব এলাকার নেবুবুনিয়া, নাপিতখালী, কামালকাটি, পশ্চিম কাদাকাটি, বন্যতলা, চাউলখোলার পাউবোর বেড়িবাঁধ মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর আছড়ে পড়া পানিতে এসব পয়েন্ট আগে থেকেই বিপন্ন হয়ে আছে। টানা বৃষ্টিতে এসব এলাকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।