খালেদা জিয়ার দুই মামলার পরবর্তী কার্যক্রম ১০ আগস্ট
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলার পরবর্তী কার্যক্রম ১০ আগস্ট নির্ধারণ করেছেন পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত। আজ সোমবার বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এ দিন নির্ধারণ করেন।
urgentPhoto
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালতের এজলাস কক্ষে প্রবেশ করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। জিয়া চ্যারিটেবল ও অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তাঁর উপস্থিতিতে আদালতে আসামিপক্ষের জেরা ও সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এদিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বাদী হারুনুর রশীদকে জেরা হয়।
আদালতে প্রবেশ করে প্রথমে আইনজীবীর মাধ্যমে বসার অনুমতি চান খালেদা জিয়া। বিচারক অনুমতি দিলে এজলাসের সামনে রাখা চেয়ারে তিনি বসেন।
এর পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বাদীকে জেরা শুরু করেন। বাদী হারুনুর রশীদের প্রতি তিনি বলেন, ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছিল জিয়ার আদর্শকে ধারণ করার জন্য; সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও দুস্থদের সহায়তা করার জন্য। মামলার সময় আপনি দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক ছিলেন। পদোন্নতির আশায় আপনি এই মামলা দায়ের করেছেন।
আপনি পদোন্নতি পেয়েছেন।’
এ পর্যায়ে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি একা নই, আমার সঙ্গে ৩০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের জমি কেনার সময় কোনো অর্থ আত্মসাৎ হয়নি। তবে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ট্রাস্ট গঠন করে এই পদের অপব্যবহার করেছেন।’
আদালত থেকে বেরিয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।’
আগামী ২৬ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের নির্বাচন থাকায় আরো সময় চেয়েছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। কিন্তু আদালত তা নাকচ করে ১০ আগস্ট মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের দিন নির্ধারণ করেন।
গত ২৩ জুলাই খালেদা জিয়ার আইনজীবীর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার।
ওই দিন আদালতের কার্যক্রম শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, জেরায় মামলার বাদী অর্থ আত্মসাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে স্বীকার করেছেন।
২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশীদ।
ওই মামলার অপর আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
অন্যদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরো একটি মামলা করে দুদক।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরে ৫ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন তিনি।
গত ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির দুই মামলায় অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।