বাকৃবিতে ২ নেতার ওপর অনাস্থা, ছাত্রলীগের গণপদত্যাগ
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে পদত্যাগ করেছে কমিটির ৬৭ জন ও বিভিন্ন হল কমিটির ১২ জন নেতাকর্মী। আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন ওই নেতাকর্মীরা।
এ সময় পদত্যাগকারী ওই নেতাকর্মীরা বর্তমান কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ এবং সন্ত্রাসী অভিযোগ করে অবিলম্বে নতুন কমিটির দাবি জানান।
বর্তমান কমিটি থেকে পদত্যাগকারীদের মধ্যে সহসভাপতি রয়েছেন একজন, যুগ্ম সম্পাদক তিনজন, সাংগঠনিক সম্পাদক তিনজন, সম্পাদকীয় পদে ১৯ জন, উপসম্পাদক ১৬ জন, সহসম্পাদক চারজন, কার্যকরী সদস্য ২১ জন। এ ছাড়া বিভিন্ন আবাসিক হল কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ জন পদত্যাগ করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বাকৃবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার তায়েফুর রহমান। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৩ সালের ৮ মে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি মুর্শেদুজ্জামান খান বাবুকে সভাপতি ও সাইফুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য বাকৃবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে। কিন্তু কমিটির মেয়াদ এক বছর উত্তীর্ণ হলেও ওই কমিটি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়। গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই কমিটি ক্যাম্পাসে অপরাজনীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা করে। এ ছাড়া ওই কমিটি টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী, ইভটিজিং, ছাত্র হত্যাসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকে। যেখানে কোনো সাধারণ নেতাকর্মীর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেননি ওই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, বাকৃবি ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুগত ক্যাডার বাহিনীর সীমাহীন সন্ত্রাস, মাদক গ্রহণ, শিক্ষার্থী নির্যাতন, শিক্ষক লাঞ্ছিত করা এবং ছাত্র হত্যাসহ নানাবিধ চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে লিপ্ত। এরই মধ্যে তাঁদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়েছে। যাদের মধ্যে বাকৃবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সহসভাপতি নূরে আলম বাপ্পী, যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল ইসলাম খান অপু, উপসম্পাদক অলিউল ইসলাম অস্ত্র মামলায় জেলহাজতে রয়েছে। অপর সহসভাপতি ওহাব রিন্টু, বিজয় বর্মণ ও যুগ্ম সম্পাদক পলাশ বাংলাদেশ মাৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীসহ চার কর্মকর্তাকে মারধর ও চাঁদাবাজির দ্রুত বিচার আইনের মামলায় গ্রেপ্তার এবং কেউ কেউ পলাতক আছেন। বর্তমান কমিটির ওই সব কর্মকাণ্ড ছাত্রলীগের নীতিবিরোধী হওয়ায় তাঁরা গণপদত্যাগ করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সেই সঙ্গে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সব ছাত্রনামধারী ক্যাডার ও সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান কমিটির সভাপতি মুর্শেদুজ্জামান খান বাবু ঈদের ছুটির পর আর ক্যাম্পাসে ফেরেননি।
তবে কার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে নেতাকর্মীরা বলেন, বর্তমান সভাপতি ও তাঁর অনুসারীরা পলাতক এবং সাধারণ সম্পাদক জেলহাজতে থাকায় পদত্যাগপত্র সরাসরি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে।
অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গণপদত্যাগ ও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ওপর অনাস্থার বিষয়ে জানতে বাকৃবি শাখার সভাপতি মুর্শেদুজ্জামান খান বাবুর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এক বছরের জন্য ২০১৩ সালের ৮ মে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বাকৃবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরে ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর ১১৯ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে শাখা ছাত্রলীগ।