পলো বাওয়া উৎসবে মাতল নরসিংদী

Looks like you've blocked notifications!
নরসিংদীর সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামে মেঘনার শাখা নদীতে রোববার পলো নিয়ে মাছ ধরতে নামে কয়েকশ মাছ শিকারী। ছবি : এনটিভি

‘জনম গেল ঘাটে ঘাটে, ভাঙা তরী বাইয়া রে আমার’ গান গেয়ে মাঝিদের আর গান গাওয়া হয়  না। রং-বেরঙের পাল তোলা নৌকাও হেলে দুলে চলে না। দিন দিন ভরাট হচ্ছে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদী-নালা আর খাল-বিল। সেই সঙ্গে  হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার নদীমাতৃক উৎসব। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যকে আর নদী বাঁচিয়ে রাখার একটি প্রচেষ্টা ‘পলো বাওয়া উৎসব’।

আনন্দঘন পরিবেশে আজ রোববার নরসিংদীর সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামে মেঘনার শাখা নদীতে পালিত হয়েছে এই উৎসব। এদিন সকাল ১০টায় নদীর জামতলা ঘাট থেকে মাছ ধরা শুরু হয়। দুপুর ২টা পযন্ত চলে মাছ ধরার উৎসব। এতে অংশ নেয় সদর উপজেলা, রায়পুরা, শিবপুরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিভিন্ন বয়সের কয়েকশ শৌখিন মাছ শিকারী।

নরসিংদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী-নালা খাল-বিলের পানি এরই মধ্যে শুকিয়ে এসেছে। আর সেসব শুকনো জলাশয়ে প্রতি বছরের আশ্বিন মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে বিভিন্ন এলাকার শৌখিন মৎস্য শিকারিদের পলো বাওয়া উৎসব। সময়টা এলেই বিভিন্ন এলাকা থেকে এক সঙ্গে দল বেঁধে উৎসবমুখর পরিবেশে পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেয়।

এই উৎসবকে ঘিরে শৌখিন মাছ শিকারীরা গড়ে তোলে ‘পলিয়া’ নামে একটি মৎস্য শিকারী সমিতি। ব্যাপক প্রস্তুতি না থাকলেও সমিতির শৌখিন মাছ শিকারীরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে পলো বাওয়ার দিনক্ষণ নির্ধারণের পর সবাইকে জানিয়ে দেয়। এ ঘোষণার পর আগ্রহীরা পলো নিয়ে উৎসবে অংশ নেয়। পর্যায়ক্রমে একেক নদীতে বা জলাশয়ে একেক দিন এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

একেকজন একটি মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে অন্যরাও আনন্দে মেতে ওঠে।  শৈল, গজার, বোয়াল, আইর, কালনা ও টাকিসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে। পলো বাওয়া দেখতে আশপাশের গ্রামের লোকজন ভিড় জমায় নদীর ঘাটে।

উৎসবের আয়োজকরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী-নালা ও খাল-বিলের তলদেশ ভরাট হয়ে প্রতিনিয়ত পানি হ্রাস পাচ্ছে। নদী দূষণসহ নানামুখী তৎপরতার কারণে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রগুলোর বেশির ভাগই বিনষ্ট হয়ে গেছে। নদী বেঁচে থাকলে বেঁচে থাকবে ঐতিহ্যবাহী এই পলো উৎসব। তাই পলো বাওয়া উৎসব থেকেই নদী রক্ষার দাবি জানানো হয়।

শৌখিন মাছ শিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, দিন দিন হারিয়ে যাওয়া বাঙালির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নদীমাতৃক প্রতিটি এলাকাতেই যেন ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করা হয়।

মাছ ধরতে আসা মোবারক অভিযোগ করে বলেন, নদীতে এখন আর তেমন মাছ পাওয়া যায় না। বিভিন্ন কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পানি নদীতে ছাড়িয়ে পড়ায় নদীর মাছ কমে যাচ্ছে। তাই নদীকে বাঁচিয়ে  রাখতে কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য না ফেলার দাবি জানিয়েছেন।