পড়তে ভালো লাগে সিডরের, আসতে চায় ঢাকায়

Looks like you've blocked notifications!
বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চিলা গ্রামে শিশু সিডর সরকার। ছবি : এনটিভি

পড়াশোনা করতে ভালো লাগে সিডরের। ঢাকায় এসে চাকরি করতে চায় সে। সঙ্গে আনতে চায় স্বজনদেরও।

আগামীকাল বুধবার সিডরের বয়স হবে ১০ বছর। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর উপকূলীয় এলাকায় আঘাত করেছিল ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। ওই রাতে বাগেরহাটের মোংলার চিলা এলাকার সেন্ট মেরিস গির্জাসংলগ্ন একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন অন্তঃসত্ত্বা সাথী সরকার।

ওই রাতেই জন্ম নেয় সাথীর একমাত্র ছেলে। রাতজুড়ে চলে সিডরের প্রবল তাণ্ডব। ভোরের আলো ফুটতেই কেটে যায় মেঘ। সূর্য হাসি দেয়। হাসি দেয় সাথীর নবজাতকও। ওই হাসির ছবি প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে। সাথী ছেলের নাম দেন সিডর সরকার। ওই প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনার বয়স হবে ১০ বছর!

সাথীর সংসারে ঝড় রয়ে গেছে আজও। দারিদ্র্যের সঙ্গে সাথীকে সংগ্রাম করতে হয় প্রতিনিয়ত। আর তাই ছেলে সিডরের বয়স ১০ বছর হলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি।

সিডর চিলা গ্রামের দিশারী হাইস্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। সিডরের বাবা জর্জি সরকার (৩৫) দিনমজুরের কাজ করেন। ওই টাকাতেই চলে সংসার। আর এতেই চালিয়ে নিতে হয় সিডরের পড়াশোনার খরচ। বিভিন্নজন বিভিন্ন সময়ে সিডরের লেখাপড়ার খরচের ব্যয়ভার বহনের আশ্বাস দিলেও ১০ বছরে কেউ এগিয়ে আসেনি বলে আক্ষেপ করেন সিডরের দাদি রিভা সরকার।

দিশারী হাইস্কুলের শিক্ষক জয়দেব নাথ বলেন, ‘সিডর সরকার খুব চঞ্চল, মিশুক ও মেধাবী ছাত্র। পড়াশুনায় যেমন ভালো, খেলাধুলায়ও সে খুব ভালো। তবে দুরন্ত বটে। সকালে সবার আগে স্কুলে আসে। আবার ছুটি হলে সবার আগে ছুটে। তবে তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। আগামীতে সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া ওর পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়াটা খুব কঠিন হয়ে পড়বে।’

সিডরের হাতেখড়ি যে পাঠশালায় সেই দিশারী ফ্রি স্কুলের শিক্ষিকা সুমা সরকার বলেন, ‘সিডর অসম্ভব মেধাবী কিন্তু খুব দুরন্ত। সে যখন দিশারী ফ্রি স্কুলে পড়ত, তখন থেকে তার কম্পিউটার শেখার জন্য খুব আগ্রহ ছিল। ওর মতো অনেকেই এখন কম্পিউটার শিখছে কিন্তু ও পারছে না অর্থের অভাবে।’

সিডরের দাদি রিভা সরকার বলেন, ‘সব সময় কাজও থাকে না। তাই খেতে-পরতে অনেক কষ্ট হলেও কষ্টের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের আশায় সিডরের লেখাপড়া চালিয়ে নিচ্ছি, জানি না কতদূর পড়াতে পারব।’

সিডরের বাবা জর্জি সরকার বলেন, ‘আমার তো ইচ্ছে হয় একমাত্র সন্তানকে ভালো স্কুলে পড়াতে, প্রাইভেট শিক্ষক দিতে কিন্তু অভাবের কারণে পারি না।’

কথা হয় সিডর সরকারের সঙ্গে। সিডর বলে, ‘পড়াশোনা আমার খুব ভালো লাগে। লেখাপড়া শিখে বড় চাকরি করব, বাবা-মা ও দাদিকে নিয়ে ঢাকায় থাকব। আমার বন্ধুদেরও নিয়ে যাব, ওদের সাথে খেলা করি তো তাই।’

কানাইনগর গ্রামে সিডরের প্রতিবেশীরা বলে, ঝড়ের রাতেই সিডরের মা সাথী সরকার আশ্রয় নেন আশ্রয়কেন্দ্রে। সাথী প্রসব বেদনার যন্ত্রণা নিয়েই নিজের জীবন বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে ওঠেন। ঝড়ের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাথী সরকারের প্রসব যন্ত্রণাও বাড়তে থাকে। অবশেষে ঝড়ের রাত ৪টার সময় সেই আশ্রয়কেন্দ্রে জন্ম নেয় ফুটফুটে শিশু সিডর। ঝড়ের রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে একটি শিশুর জন্ম হয়েছে শুনে সিডরকে দেখতে পরের দিন সকালে সেখানে শত শত মানুষের ঢল নামে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অনেকে সিডরকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে চাইলেও তা কেউ করেনি। প্রতিবছর ১৫ নভেম্বর এলে সাংবাদিকরা শুধু সিডরের ছবি তুলে নিউজ করে। কিন্তু ওতে সিডরের তো কোনো উপকার হয় না।

মোংলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সিডরের পরিবার যে আর্থিক সংকটের মধ্যে দিনাতিপাত করছে, বিষয়টি আমি জানতাম না। তবে তারা আমার সাথে যোগাযোগ করলে আগামী দুই মাসের মধ্যে তাদের সরকারি সাহায্য সহায়তা দেওয়া সম্ভব হতে পারে।’