বস কে? বলেই গুলি করল মুখোশধারী

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর বনানীর ৪ নম্বর সড়কের ১১৩ নম্বর বাড়িতে গতকাল মঙ্গলবার এই দুজনসহ চারজন ঢুকে আদম ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেনকে (ইনসেটে) গুলি করে হত্যা করে। আহত করে আরো তিনজনকে। ছবিটি সিসি টিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া। এনটিভি

‘আমি তখন স্যারের রুমেই ছিলাম, স্যারকে খাবার দিয়ে বের হচ্ছিলাম। হঠাৎ মুখোশ পরা একজন বলে, বস কে? বস কে? বলতে বলতে রুমে ঢুকেই স্যারকে গুলি করে বের হয়ে যায়। আমি তাকিয়ে দেখি স্যার চেয়ার থেকে নিচে পড়ছেন। তখন দৌড়ে গিয়ে স্যারকে ধরলাম।’

রাজধানীর বনানী এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত আদম ব্যবসায়ী মো. সিদ্দিক হোসেনের অফিস সহকারী আলী হোসেন আজ বুধবার সন্ধ্যায় এনটিভি অনলাইনকে এভাবেই গতকাল রাতের ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। 

আলী হোসেন বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে স্যারসহ আমরা নয়জন অফিসে ছিলাম। এ সময় স্যার তাঁর রুমেই ছিলেন, অফিসের বিভিন্ন কাজ করছিলেন। স্যার আমাকে ডেকে বললেন, পেয়ারা আর পানি দিতে। আমি তখন স্যারের জন্য পেয়ারা কেটে নিয়ে এবং গ্লাসে পানি নিয়ে স্যারের রুমে যাই। স্যারের সামনে খাবার রেখে আমি রুম থেকে বের হচ্ছিলাম। এ সময় হঠাৎ মুখোশ পরা একজন বলে, বস কে? বস কে? বলতে বলতে রুমে ঢুকেই স্যারকে গুলি করে বের হয়ে যায়। আমি তাকিয়ে দেখি স্যার চেয়ার থেকে নিচে পড়ছেন। তখন দৌড়ে গিয়ে স্যারকে ধরলাম। এর কয়েক সেকেন্ড পরই শুনতে পাই বাইরে গুলির শব্দ। ভয়ে চিৎকার করছিলাম।’

বনানীর ৪ নম্বর সড়কের ১১৩ নম্বর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাড়ির নিচ তলাতেই ছিল মুন্সী ওভারসিজ নামের নিহত আদম ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেনের অফিস। 
ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় স্মার্ট কেয়ার করপোরেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস। ওই অফিসের মহাব্যবস্থাপক আবু সাইদ বাপ্পি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, নিহত আদম ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেন এখানে প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে অফিস ভাড়া নিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে ভালো মানুষ হিসেবেই জানি। তাঁর অফিস ভাড়া প্রতি মাসে ৫৫ হাজার টাকা। কী কারণে তাঁকে এভাবে হত্যা করা হলো সে সম্পর্কে কিছুই ধারণা করা যাচ্ছে না। 

নিহত আদম ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেনের ছোট ভাই আব্দুল লতিফ আজ সন্ধ্যায় এনটিভি অনলাইনকে বলেন, তাঁর বড় ভাই সিদ্দিক হোসেন প্রায় ২০ বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান। কেন, কারা তাঁকে হত্যা করছে সে সম্পর্কে কিছুই ধারণা করতে পারছেন না তাঁর পরিবারের সদস্যরা। 

আব্দুল লতিফ আরো বলেন, সিদ্দিক হোসেনের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত  করা হয়েছে। লাশ গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানেই পারিবারিক কবস্থানে লাশ দাফন করা হবে।   
 

এর আগে আজ দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ সাংবাদিকের জানান, এই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে জানা গেছে রাত ৮টার দিকে চারজন মুখোশধারী লোক ওই অফিসে প্রবেশ করে। তাদের মুখে মাস্ক (সার্জিক্যাল মুখোশ) পরা ছিল। ধুলা বালির জন্য যে মাস্ক পরা হয় সেগুলো। 

মোস্তাক আহমেদ আরো জানান, খুনিরা ভেতরে ঢুকে মালিককে গুলি করে এবং বের হয়ে আসার সময় আরো কিছু গুলি চালায়। তখন অনেকে আহত হয়। এই ঘটনা তদন্তে যে বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে তা হলো পারিবারিক কোনো বিষয় আছে কি না? ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক কোনো বিষয় আছে কি না? এগুলো নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। 

অপর দিকে দুর্বৃত্তের গুলিতে আদম ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনায় আজ বুধবার সন্ধ্যায় বনানী থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।  

বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মতিন সন্ধ্যায় এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, আদম ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেন হত্যার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী জোসনা বেগম অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ২৩। 

আবদুল মতিন আরো বলেন, ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। সব দিক মাথায় রেখেই ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে এরই মধ্যে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। আশা করছি খুব দ্রুতই জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হবে। 

গতকাল মঙ্গলবার বনানীতে রাত ৮টার দিকে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে ঢুকে গুলি করে প্রতিষ্ঠানের মালিক সিদ্দিক হোসেনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় গুলিতে আহত হয়েছেন প্রতিষ্ঠানের কর্মী মোস্তাক হোসেন, মোখলেসুর রহমান ও মিরাজ পারভেজ। নিহত সিদ্দিক জনশক্তি রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান মুন্সী ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী ছিলেন।