চট্টগ্রামে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার

পিলারের কাঠামো ভেঙে পড়ার পর কেটে ফেলা হলো রড!

Looks like you've blocked notifications!

চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের পিলারের কাঠামো ভেঙে পড়ার পর সেখান থেকে কেটে ফেলা হয়েছে ৩০ ফুট লোহা। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে কোনো একসময় ৪০ ফুট দীর্ঘ লোহার রডের ৩০ ফুট কেটে ফেলা হয়। 

এর আগে ঘটনার পরই শ্রমিকরা দ্রুত দুটি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেন ভেঙে পড়া অংশ। 

গতকাল বুধবার রাতে নির্মাণাধীন আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে পিলার তৈরির জন্য সিমেন্ট-সুরকি ঢালাই দেওয়ার আগেই ভেঙে পড়ে পিলারের কাঠামো। ফ্লাইওভারটির একটি লুপ ষোলশহরের সফদর আলী ম্যানসনের সামনে দিয়ে সানমার ওশান সিটির সামনে নামার কথা। ওই লুপের নিচে একটি পিলারের কাঠামো তৈরি হয়েছিল রড দিয়ে। দুই একদিনের মধ্যে সেটিতে ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও গতকাল রাতে তা মাটিতে পড়ে যায়। সফদর আলী ম্যানসনের ফটকের সামনেই এ ঘটনা ঘটে। 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এনটিভিকে জানান, ফ্লাইওভারের পিলার পড়ে যাওয়ার ঘটনা তিনি আজ বৃহস্পতিবার সকালে জেনেছেন। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিন দেখবেন। এ নিয়ে ধারণা নেবেন। পরে এ বিষয়ে কারো কোনো অবহেলা ছিল কি না তা খতিয়ে দেখবেন। 

তবে এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ সালামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিডিএর একজন প্রকৌশলী জানান, এসব পিলার তৈরির সময় ‘সিকিউরিটি লক’ দিয়ে ঢালাই কাজ করতে হয়। কিন্তু পিলার তৈরি করে ঢালাই করার আগে লক না থাকা ও পিলারের ওপরের অংশে ওজন বেড়ে যাওয়ায় এটি হেলে পড়ে গেছে। এখানে কাজে অবহেলা ছিল বলে মনে করেন তিনি। 

বুধবার রাতে এনটিভি অনলাইনে খবরটি প্রকাশের পর নগরজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। দৈনিক আজাদীর ফটোসাংবাদিক আমিন মুন্না বলেন, ‘সকালে মেয়র গলি থেকে শুরু করে পুরো এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পিলারের অস্তিত্ব পাইনি। ধসে পড়া পিলারের লোহার রডগুলো এমনভাবে ছাটাই করা হয়েছে একদিন আগে যে পিলারটি ধসে পড়েছে বোঝার উপায় নেই।’ 

সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার পার্থ প্রতিম বিশ্বাস বলেন, ‘এ খবর এনটিভি অনলাইনে প্রকাশের পর জানতে পারি। কিন্তু সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে পাইনি। সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ সালামকে ফোন করার পর তিনি ধরেননি। তাঁর পিএস জানান, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর ঘটনাস্থলের লোকজনেরও কিছু হয়নি বলে জানান।’ 

দৈনিক পূর্বকোণের ফটোসাংবাদিক মিয়া আলতাফ বলেন, ‘সড়কে খোঁজার পর ধসে পড়া পিলারটি পাইনি। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের ওপর থেকে সব পিলারের ছবি তুলে রেখেছি। পরে দেখেছি একটি পিলারের রড ছাঁটাই করা হয়েছে।’

ঘটনার সময় খুব কাছে থেকে দেখা গাড়ির চালক মো. কাসেম জানান, গাড়ি নিয়ে জিইসি মোড়ের দিকে আসার সময় ঘটনাস্থলের খুব কাছ থেকে পিলারটি হেলে পড়তে দেখেছেন। তাঁর গাড়ির ওপর পড়ার আশঙ্কায় দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে এসেছেন।

চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আখতারুজ্জামান চৌধুরীর নামে মুরাদপুর-লালখান বাজার ফ্লাইওভারের নামকরণ করা হয় আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার।

নগরীর ২ নম্বর গেটে একটি লুপ ও র‌্যাম্পসহ মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬২ কোটি ২১ লাখ টাকা। সিডিএ জানায়, মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারটির মধ্যবর্তী স্থানে প্রধান চারটি সংযোগস্থল রয়েছে। এর মধ্যে ষোলশহর ২ নম্বর গেট এবং জিইসি মোড়। তবে জিইসি মোড় ও ২ নম্বর গেট এলাকায় প্রয়োজনীয় সংযোগস্থল নির্মাণ করে সেটি ফ্লাইওভারে সংযুক্ত করা হবে। মূলত এর মাধ্যমে এই দুই এলাকার যানবাহন সহজেই মুরাদপুর ফ্লাইওভারে ওঠা-নামা করতে পারবে।