কপোতাক্ষ নদের পানিতে নিমজ্জিত স্কুল, রাস্তায় ক্লাস

Looks like you've blocked notifications!
তালার রাঢ়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তার ওপর ক্লাস করছে। ছবি: এনটিভি

কপোতাক্ষ নদের উপচেপড়া পানিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গ্রামের পর গ্রাম। পানির কবল থেকে বাদ পড়েনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পানির নিচে নিমজ্জিত হওয়ায় স্থগিত হয়ে গেছে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে রাস্তার ওপর।

এ ছাড়া কয়েক দিনের টানা অতিবৃষ্টিতে কপোতাক্ষ তীরের দুই উপজেলা তালা ও কলারোয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত ও বীজতলা। ধসে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি। রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় জনজীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি।

নগরঘাটা গাবতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তায়ও পানি উঠে গেছে। ওয়ান ও টু-এর বাচ্চাদের নিয়ে আমি একটি দোকানে ক্লাস করাচ্ছি। একটি বাড়িতে দুপুরের খাওয়ার আগ পর্যন্ত থ্রি আর ফোরের বাচ্চাদের নিয়ে ক্লাস করাচ্ছি।

৬৩ বছরের প্রাচীন তালার রাঢ়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের ক্লাস চলছে রাস্তার ওপর। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিখা রানী চৌধুরী বলেন, ‘মহান ভাষা আন্দোলনের বছর ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুল। ১০ বছর ধরে এর একই অবস্থা। বছরের ছয় থেকে সাত মাস কপোতাক্ষ নদের পানি, বন্যার পানি অবস্থান করে। দ্রুত সাইক্লোন শেল্টার বা পরিত্যক্ত ঘোষণা করে অন্যত্র স্কুল করে দিলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।’

শিক্ষার্থীরা জানায়, রাস্তার ওপর ক্লাস করতে তাদের মন চায় না। এতে জনসাধারণের চলাচলেও বাধাগ্রস্ত হয়।

রাঢ়ীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৪০০। তাদের পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। রাস্তার ওপর ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় বেসরকারি সংস্থাও এ ব্যাপারে সহায়তা দিচ্ছে। অস্থায়ী গৃহনির্মাণ করে দিচ্ছেন তাঁরা। বছরে ছয় মাস বিদ্যালয়ের সব ভবন পানির নিচে থাকে। এবারও তাই হয়েছে। বিদ্যালয়টি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন গ্রামবাসী।

রাঢ়ীপাড়ার শিক্ষাপ্রেমী হাজের আলী খাঁ চার কাঠা জমি দিয়েছেন দুর্যোগকালে অস্থায়ীভাবে স্কুল গড়ে ব্যবহারের জন্য। যতদিন প্রয়োজন ততদিন তাঁরা এটা ব্যবহার করতে পারবেন।

তালা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রাজমনি বলেন, তালা উপজেলায় প্রায় ৫০ শতাংশ স্কুল পানির নিচে নিমজ্জিত। কপোতাক্ষ নদ একেবারের তালা উপজেলার মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত। কপোতাক্ষ নদের আশপাশের অধিকাংশ বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত। এ অবস্থায় দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রণব কুমার মল্লিক বলেন, কয়েক দিন আগের অতিবর্ষণে তালার বহু স্কুল জলমগ্ন। কিছু সংখ্যক স্কুলের শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকেছে। সেখানে ক্লাস নেওয়া সম্ভব নয়। অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার নিয়ম থাকায় উপজেলার সব স্কুলের দ্বিতীয় সাময়িকী পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। বিদ্যালয় সংস্কারে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করা হয়েছে।