ঢাকায় যেতে মানা করেছিলাম : নিলয়ের মা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর স্থায়ীভাবে রাজধানীতেই বসবাস করতেন নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, যিনি নিলয় নীল নামে বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি করতেন। বছরে দু-তিনবার পিরোজপুরের সদর উপজেলা গ্রামের বাড়িতে যেতেন বাবা-মাকে দেখার জন্য। সেখানে তাঁর এক বোনও থাকেন।
নীলাদ্রি উপজেলার চলিশা গ্রামের তারাপদ চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে। সবশেষ ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ বাড়ি থাকার পর ফিরে আসেন ঢাকায়। ফেরার সময় মা অপর্ণা চট্টোপাধ্যায়কে বলেছিলেন, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেই ঢাকায় যাচ্ছেন। কিন্তু মা ছেলেকে বলেছিলেন, বাড়ি থেকেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ান এলাকায় নীলাদ্রিকে নিজ বাসায় কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পর বিকেলে নীলাদ্রির বাড়ি গিয়ে দেখা যায় মাতম চলছে। আশপাশের প্রতিবেশীরাও এসেছেন। নীলাদ্রির বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে তাদের চোখ ভিজছে জলে।
নীলাদ্রির শেষবার বাড়ি যাওয়ার স্মৃতি মনে করে মা অপর্ণা চট্টোপাধ্যায় বিলাপ করছিলেন, ‘আমার এখন কী হবে? তোমরা আমাকে একটু বিষ এনে দাও। ওরে ঢাকায় ফিরে যেতে বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম, বাড়িতে বসে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে।’ এসব বলতে বলতেই মূর্ছা যান তিনি।
নীলাদ্রি চলিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তেজদাসকাঠি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক এবং সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যামিক পাস করেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বাবা সাধারণ গৃহস্থ হলেও বাড়ির আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই শিক্ষক-আইনসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। এলাকাবাসী জানান, নীলাদ্রি সবার কাছেই খুব ভদ্র ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল।
নীলাদ্রির পিঠাপিঠি বোন জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায় গোপা। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের এলাকায় কোনো শত্রু ছিল না। সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘ আট মাস পরে সে বাড়ি আসে। কী কারণে তাঁকে হত্যা করা হলো তা আমরা জানি না। আমরা চাই, সরকার এর সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করুক। না হলে তাঁর আত্মা শান্তি পাবে না।’