ছেলের কবরে চিরনিদ্রায় আনিসুল হক

Looks like you've blocked notifications!
আর্মি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তাঁর সামরিক সচিব মিঞা মুহম্মদ জয়নাল আবেদীন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানান। ছবি : ফোকাস বাংলা

ছেলের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয় তাঁকে।

যে কবরটিতে ঢাকা উত্তর সিটির জনপ্রিয় মেয়রকে সমাহিত করা হলো, সেটিতেই ২০০২ সালে দাফন করা হয়েছিল তাঁর ছোট ছেলে শারাফুল হককে। পাশেই রয়েছে আনিসুল হকের মায়ের কবর।

এর আগে বিকেল সোয়া ৪টায় রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে আনিসুল হকের দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় হাজারো মানুষের ঢল নামে। জানাজার আগে সর্বস্তরের মানুষ তাঁদের প্রিয় মেয়রের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।

গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক সেন্ট্রাল মসজিদে আনিসুল হকের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তাঁর মরদেহ ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে। সেখানে পরিবারের পক্ষে ভাই সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক মরদেহ গ্রহণ করেন। এ সময় সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। আনিসুল হকের লাশের সঙ্গে এসেছেন স্ত্রী রুবানা হক ও ছেলে নাভিদুল হক। সেখান থেকে দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে তাঁর মরদেহ বনানীর বাসায় নেওয়া হয়। এ সময় পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানে এক শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুর পৌনে ২টার দিকে ওই বাসভবনে যান। তিনি মেয়রের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রীকে দেখে তাঁকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক। শেখ হাসিনা এ সময় রুবানা হক ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমাবেদনা প্রকাশ করে সান্ত্বনা দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। এরপর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে বসে কথা বলেন তিনি।

বাসভবনে প্রায় ৩০ মিনিট অবস্থান করেন প্রধানমন্ত্রী। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মরহুমের ভাই সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকসহ মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

বিকেল ৩টার পর বনানীর বাসা থেকে বের হয়ে আনিসুল হকের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি আর্মি স্টেডিয়ামে পৌঁছায়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্বের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সারোয়ার হুসেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তাঁর সামরিক সচিব মিঞা মুহম্মদ জয়নাল আবেদীন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিনের পক্ষ থেকে সার্জেন্ট অব আর্মস ক্যাপ্টেন মোস্তাক আহমেদ শ্রদ্ধা জানান।

এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ সারিবদ্ধভাবে আনিসুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মতিয়া চৌধুরী, কর্নেল (অব.) ফারুক খান ও আবদুর রাজ্জাক, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও মুকুল বোস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ।

এর আগে দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আনিসুল হকের বনানীর ২৭ নম্বর রোডের বাসায় গিয়ে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়।

গত ২৯ জুলাই নাতির জন্ম উপলক্ষে ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে লন্ডনে যান আনিসুল হক। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ আগস্ট তাঁকে লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর মস্তিষ্কে প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা। প্রায় সাড়ে তিন মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।