৫ বছর পর বাবা-মাকে দেখল সুমি, দম্পতি কারাগারে
‘আমরা মেয়ের সুখ খুঁজতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ সুখের বদলে আমার মেয়ের এই করুণ পরিণতি। আমরা এই নির্যাতনের ন্যায়বিচার চাই। আর কোনো বাবা-মা যেন এমন ভুল না করে।’
চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শুয়ে ছিল সুমি খাতুন (১৫)। তাকে এ অবস্থায় দেখে বিলাপ করে কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলেন তার মা আঞ্জুয়ারা খাতুন ও বাবা শফিকুল ইসলাম। তাঁদের কান্না দেখে অন্যরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। কিন্তু সবাই কাঁদলেও হাসছিল সুমি। পাঁচ বছর পরে যে বাবা-মায়ের দেখা পেল ওই শিশু!
গত রোববার পাবনার চাটমোহরের এক বাসা থেকে অসুস্থ ও গৃহবন্দি অবস্থা থেকে উদ্ধার করা হয় গৃহপরিচারিকা সুমিকে। ছোট শালিকা এলাকার ওই বাসার গৃহকর্তা আবদুস সোবহান বিচ্ছু ও তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসী বেগমকে গতকাল সোমবার রাতে আটক করে পুলিশ। দীর্ঘ পাঁচ বছর সুমি তাঁদের বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করে। এই পাঁচ বছর বাবা ও মায়ের দেখা পায়নি শিশুটি।
এদিকে এ ব্যাপারে সোমবার রাতে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। সুমির মা আঞ্জুয়ারা খাতুন বাদী হয়ে চাটমোহর থানায় এই মামলা করেন।
আজ মঙ্গলবার অভিযুক্ত সোবহান বিচ্ছু ও ফেরদৌসিকে আদালতের মাধ্যমে পাবনা কারাগারে পাঠানো হয়।
মেয়ে সুমিকে উদ্ধারের খবর পেয়ে ঢাকা থেকে সোমবার রাতে মেয়ের কাছে ছুটে আসেন বাবা শফিকুল ইসলাম ও মা আঞ্জুয়ারা খাতুন।
শফিকুল ও আঞ্জুয়ারার বিলাপ শুনে পুরো হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। পুলিশ, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও উৎসুক জনতা কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
মা আঞ্জুয়ারা বুকে জড়িয়ে ধরতেই অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নেয় সুমি। এ সময় সে তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলে, ‘এখন কেন কাঁদছো। আমাকে কাজে দেওয়ার সময় মনে ছিল না!’
এর আগে মানবাধিকার কমিশন চাটমোহর উপজেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক কে এম বেলাল হোসেন, থানার ওসি তদন্ত মো. শরিফুল ইসলাম, থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল লতিফ সুমির শরীরের খোঁজখবর নেন। এ সময় তাঁরা সুমির মা-বাবার সঙ্গে কথা বলেন এবং যাবতীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
সুমির চাচা মাসুদ রানা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মেয়ে দেখতে খুব সুন্দর ছিল। তাকে নির্যাতন করে এমন অবস্থা করা হয়েছে। যা দেখতে এখন ভয়ঙ্কর মনে হয়। আমরা গরিব মানুষ। অভিযুক্তরা বিভিন্নভাবে আপস-মীমাংসার কথা বলছে। কিন্তু আমরা এর ন্যায্যবিচার চাই।’
সুমির মা আঞ্জুয়ারা খাতুন বলেন, ‘রোববার রাতে খবর পাওয়ার পর থেকেই ওই বাড়ির মহিলা (ফেরদৌসি বেগম) বারবার মোবাইলের মাধ্যমে মামলা না করার অনুরোধ জানান এবং টাকা নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার কথা বলেন। আমি তাঁদের কোনো কথায় রাজি হইনি। আমার মেয়েকে নির্যাতনের জন্য সঠিক বিচার চাই।’
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আহসান হাবিব জানান, মঙ্গলবার সকালে আটককৃত দুজনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে পাবনার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবীর জানান, মামলা দায়েরের সঙ্গে সঙ্গেই সোমবার রাতে নির্যাতনকারী দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।