ইউরোপ থেকে দেওয়া হয় সিদ্দিক হত্যার কন্ট্রাক্ট!

Looks like you've blocked notifications!

বনানীর জনশক্তি রপ্তানিকারক সিদ্দিক হোসেন মুন্সীকে হত্যার জন্য হেলাল উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে ভাড়া করেন ইউরোপের একটি দেশে অবস্থান করা বাংলাদেশের এক পলাতক সন্ত্রাসী।

আর হত্যাকাণ্ডের মাত্র সাতদিন আগে এই হত্যার আদেশ পান হেলাল। সিদ্দিক হোসেনকে হত্যা করতে এই কাজে অংশ নেন হেলালসহ ছয়জন।

আজ বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই জানানো হয়, সিদ্দিক হোসেন হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুর এলাকা থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যরা হেলালকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেন। সিটিটিসি ও ডিবি উত্তরের সদস্যরা গুলশানের কালাচাঁদপুরে এই অভিযান চালান। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের গুলিবিনিময় হয়। একপর্যায়ে হেলাল ধরা পড়েন এবং অপর একজন পালিয়ে যান। এ সময় পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ও নয়টি গুলি উদ্ধার করা হয়। 

এরপর হেলালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যগুলো সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, সিদ্দিক হোসেন হত্যাকাণ্ডে অপারেশনাল কমান্ডার হিসেবে হেলাল দায়িত্ব পালন করেছেন বলে তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। আর এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য ইউরোপের একটি দেশ থেকে তাঁকে একজন কন্ট্রাক্ট দিয়েছিল। এ জন্য কিছু টাকাও দিতে চাওয়া হয়েছিল। তবে হেলালকে বলা হয়েছিল যে, সিদ্দিক হোসেনের অফিসে কিলিং মিশনের সময় তাঁরা লাখ লাখ টাকা লুট করতে পারবেন। যদিও ওই অফিসে তেমন কোনো টাকা সে সময় ছিল না বলেও পুলিশকে জানিয়েছেন হেলাল।

যেভাবে অপারেশন

মনিরুল দাবি করেন, ইউরোপে বসবাসকারী ওই ব্যক্তি বাংলাদেশের একজন নামকরা সন্ত্রাসী। তাঁর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। ২০১৩ সালের দিকে দেশে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের সময় তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তিনি ছাত্রদলের মধ্যম সারির নেতা ছিলেন বলেও জানান মনিরুল ইসলাম। অন্যদিকে গ্রেপ্তার হেলালও ছাত্রদলের একসময়ের মধ্যম সারির নেতা ছিলেন। সে কারণে তাঁদের মধ্যে আগে থেকেই পরিচয় ছিল। তাই এই হত্যা করার জন্য হেলাল রাজি হয়েছিলেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

হত্যাকাণ্ডের দিনে হেলাল যেহেতু অপারেশনাল কমান্ডার ছিলেন, তাই তিনি বাসার ভেতরে প্রবেশ করেননি। হেলালসহ দুজন বাসার বাইরে অবস্থান করছিলেন। আর বাসার ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন চারজন। তবে তাঁদের ছয়জনের কাছেই একটি করে পিস্তল ছিল। মোট ছয়টি পিস্তলই এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়। যেহেতু মূল উদ্দেশ্যই ছিল হত্যা করা, তাই তাঁরা সেদিন ২৫-২৬টি গুলি চালিয়েছিলেন।

কেন বা কী উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার হেলাল এই সম্পর্কে বিস্তারিত কিছুই জানে না বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন। তাঁকে শুধু হত্যার জন্য ভাড়া করা হয়েছিল। তবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করেন মনিরুল। আর এ জন্য আদালতে হেলালের রিমান্ড আবেদন করা হবে। আর তদন্ত শেষে এই ঘটনার বিস্তারিত বেরিয়ে আসবে বলেও জানান তিনি। 

সিদ্দিকুর রহমান মুন্সী জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মুন্সী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ছিলেন। বনানীর ৪ নম্বর সড়কের একটি বাসায় ওই কার্যালয়ের অবস্থান। গত ১৪ নভেম্বর ওই কার্যালয়ে ঢুকেই দুর্বৃত্তরা গুলি করে সিদ্দিককে হত্যা করে। 

ওই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মির্জা পারভেজ (৩০), মোখলেসুর রহমান (৩৫) ও মোস্তাফিজুর রহমানও (৩৯) গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন নিহত ব্যবসায়ীর স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম বাদী হয়ে বনানী থানায় চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সিদ্দিক পরিবার নিয়ে রাজধানীর উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর সড়কে একটি বাসায় বসবাস করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।