এইচএসসির ফল

ইংরেজিতেই ডুবেছে যশোর বোর্ড

Looks like you've blocked notifications!

ইংরেজি বিষয়ের কারণে যশোর শিক্ষা বোর্ড এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। দেশের আটটি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে এই বোর্ডে এবার পাসের হার সবচেয়ে কম। গত বছর ৬০ দশমিক ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করলেও এ বছর এই বোর্ড থেকে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী কম পাস করেছে। পাসের হার মাত্র ৪৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। 

পাসের হার কমার পাশাপাশি এবার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। গত বছর চার হাজার ২৩১ জন জিপিএ ৫ পেলেও এবার সেই সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি কম এক হাজার ৯২৭ জন। 

ফলাফলের এই বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে শিক্ষক ও বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ইংরেজি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হওয়ায় পাসের হার কমে গেছে। 

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা প্রথমপত্রের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন অনেক বেশি কঠিন হওয়ায় ফলাফল খারাপ হয়েছে। 

যশোরের ড. আবদুর রাজ্জাক কলেজের অধ্যক্ষ শহীদ ইকবাল বলেন, ‘ইংরেজি প্রথমপত্রের মূল প্রশ্নপত্র ও বাংলা প্রথমপত্রের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও অভিভাবকরা পরীক্ষার দিন থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন। বয়সের সঙ্গে ও সিলেবাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রশ্নপত্র আরো ফ্লেক্সিবল (নমনীয়) হওয়া উচিত ছিল বলে আমার মনে হয়।’

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ইংরেজিতে অকৃতকার্য হওয়ায় পাসের হার কমে গেছে। তারপরও ইংরেজিতে পাস করেছে ৫০ দশমিক ৯১ শতাংশ। গতবারের অনেক শিক্ষার্থী এবার কেবল ইংরেজিতে পরীক্ষা দিয়েছে। সে কারণে গড় পাসের হার থেকে ইংরেজিতে পাসের হার বেশি মনে হলেও এবারের পরীক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ফেল করেছে ইংরেজিতে। তা ছাড়া ওই সময় চলা আন্দোলন-কর্মসূচির প্রভাবও পরীক্ষার ফলাফলে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। 

এক প্রশ্নের জবাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘ইংরেজি প্রথমপত্র ও বাংলা প্রথমপত্রের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন কিছুটা কঠিন হয়েছিল বলে আমরা শুনেছিলাম। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের তো কিছু করার নেই।’

যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, ‘ইংরেজি প্রথমপত্রের প্রশ্নপত্র খুবই কঠিন হয়েছিল। পরীক্ষার দিনই শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে জানিয়েছিল। পরীক্ষার ফলাফলেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।’
 
যশোরের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যান্টনমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ বোরহানুস সুলতান বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিয়েই বলেছিল, ইংরেজি প্রশ্ন খুব কঠিন হয়েছে। পাশাপাশি পদার্থ বিজ্ঞানের পরীক্ষাও খারাপ হওয়ার কথা বলে তারা।’ তাঁর মতে, এবারের প্রশ্নপত্র বেশ আলাদা। ধারাবাহিকতা না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের ভিন্নতার শিকার হয়েছে। ইংরেজি যেহেতু ভিন দেশি ভাষা, সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একটু ভীতি থাকে। তা ছাড়া এবার বোর্ড প্রফেসরদের দিয়ে প্রশ্ন করানোতে গুণগতমান ঠিক থাকলেও আগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। সে কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর কাছে এ প্রশ্ন হয়ে ওঠে খুবই কঠিন। তিনি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রশ্ন ব্যাংক ফরমুলা বাস্তবায়নের দাবি জানান।

এদিকে যশোর সরকারি এম এম কলেজের অধ্যক্ষ নমিতা বিশ্বাস জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে এবার ৫৮৬ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে অকৃতকার্য হয়েছে ১৪৩ জন। এ থেকেই অনুমান করা যায় পরীক্ষার ফলাফলের অবস্থা। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্লাস বাদ দিয়ে প্রাইভেট পড়তেই ব্যস্ত থাকে। ইংরেজি প্রশ্নপত্র কঠিন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের সাথে সুনিবিড় পরিচয় না থাকা, ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা, সর্বোপরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ক্লাস থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে যশোর বোর্ডে এবার ফল বিপর্যয় ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।’ প্রশ্নপত্র তৈরি ও খাতা মূল্যায়নের সঙ্গে সম্পৃক্তদের দুর্বলতার বিষয়টিও খারাপ ফলাফলের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন এই অধ্যক্ষ।

এ বছর যশোর বোর্ডের অধীনে এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৫ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৬১ হাজার ৩৮১ জন ছাত্র এবং ৫৫ হাজার ৫২৪ জন ছাত্রী। যশোর বোর্ডের অধীন খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৫৫৮টি কলেজের শিক্ষার্থীরা ২১২টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয়।

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ডের ১৩টি কলেজ থেকে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। আর শতভাগ পাস করেছে এমন কলেজের সংখ্যা তিনটি। 

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, একজনও পাস করেনি এমন কলেজের মধ্যে রয়েছে যশোরের রঘুনাথপুর হায়ার সেকেন্ডারি কলেজ, বাগেরহাটের টি এ ফারুক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও খলিলুর রহমান কলেজ, খুলনার গাজী আবদুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ ও আইআই কলেজ, মাগুরার দক্ষিণ নওয়াপাড়া সম্মিলনী কলেজ, শিবরামপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও পাল্লা বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নড়াইলের মুলিয়া পাবলিক কলেজ, কুষ্টিয়ার আলহাজ আবদুল গনি কলেজ, ঝিনাইদহের ডিজিপিএল মডেল কলেজ ও ফজর আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

এ ছাড়া শতভাগ পাস করা তিনটি কলেজ হলো ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ, কুষ্টিয়ার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ ও খুলনার বরুনাবাজার কলেজিয়েট স্কুল।