বোরো চাষ নিয়ে শঙ্কায় কেশবপুরের চাষিরা

Looks like you've blocked notifications!
যশোরের কেশবপুরের চাতরার বিলে সেচপাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। ছবি: এনটিভি

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় ধান চাষে কৃষককে সবচেয়ে বেশি মুনাফা দিচ্ছে বোরো। পাশাপাশি দেশের খাদ্য চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণেও সহায়তা করছে সেচনির্ভর এ ধানটি। তাছাড়া গেল বছর কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়ায় এবার বোরো আবাদে ঝুঁকছে কৃষক। কিন্তু মৎস্য ঘেরের কারণে বিল, জলাশয়গুলোতে এখনও পানি থাকায় কৃষকরা বীজতলা তৈরি করতে পারছে না। ফলে সময়মত বোরো চাষ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে কৃষকদের দাবির মুখে চাতরার বিলের পানি সেচ পাম্প দিয়ে নিষ্কাশন কাজ চালানো হচ্ছে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক সময়ে বোরো বীজতলা প্রস্তুত করতে না পারলে বোরো চাষ দেরী হবে। ফলে অকাল বন্যায় ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে। এক সময় কেশবপুরে আউশ, আমন ও বোরো আবাদ হতো সমানতালে। কিন্তু আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব, ঘেরের কারণে অকাল জলাবদ্ধতাসহ নানাবিধ সংকটে এ উপজেলা থেকে আউশ, আমন আবাদ প্রায় উঠে গেছে। তাই এসব এলাকার মানুষ সেচ নির্ভর বোরো আবাদে ঝুঁকে পড়েছে। ঘেরের সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে এ উপজেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলে কেবল একটি ফসল বোরো আবাদ হয়।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর এ উপজেলায় ১৫ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমি বোরো আবাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়। যার জন্য বীজতলা প্রয়োজন ৭৯৬ হেক্টর জমি। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে বীজতলা তৈরির কাজও। এ পর্যন্ত ৬০০ হেক্টর বীজতলা তৈরি হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ দাবি করলেও কৃষকরা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তাদের অভিযোগ, এ উপজেলায় ৪ হাজার ৬১৭টি মাছের ঘেরের ভেতর ৭ হাজার হেক্টর জলাধার রয়েছে। এসব ঘের বেড়িবাঁধ এলাকার। শত শত কৃষক ঘেরের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় বাধ্য হয়ে আত্মীয়স্বজনের জমির বিভিন্ন উঁচু স্থানে বীজতলা তৈরি করছেন।

খতিয়াখালি গ্রামের কৃষক সাবেক ইউপি সদস্য জয়দেব দাস জানান, ঘের মালিক খাতিয়াখালি বিল ও বিল গরালিয়ার পানি নিষ্কাশন না করায় শার্শা গ্রামে বীজতলা তৈরি করেছেন। এজন্য বীজতলা তৈরি করতে বিলম্ব হওয়ায় ধান কাটতেও বিলম্ব হবে। ধান দেরিতে কাটার কারণে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ঝড়-বৃষ্টিতে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ সময় সামান্য বৃষ্টিতে ঘেরের ভেতর জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

মধ্যকুল গ্রামের কৃষক শাহীনুর রহমান জানান, অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ ও প্রধান নদ-নদীগুলো পলিতে ভরাট হওয়ার কারণে তিন বছর ধরে কেশবপুর শহরে অকাল জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। দেরীতে ধান রোপনের কারণে তাঁরা উৎপাদিত ধান বাড়িতে উঠানো নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।   

কৃষক সিদ্দিকুর রহমান জানান, পাঁজিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ বিলগুলোর পানি এখনও ঘের মলিকরা নিষ্কাশন কাজ শুরু করেননি। কৃষকের দাবির মুখে এরই মধ্যে ঘের মালিক চাতরার বিলের পানি নিষ্কাশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে এ এলাকার অধিকাংশ কৃষক বীজতলা তৈরি করতে মরিয়া হয়ে উঠলেও জলাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

কেশবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, বোরো ধানের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময় হলো ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। নাবিতে বৃষ্টি হওয়ায় এ বছর বীজতলা তৈরি করতে সামান্য বিলম্ব হয়েছে। তবে অধিকাংশ এলাকায় বীজতলা তৈরির কাজ প্রায় সম্পন্নের পথে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ধানের ভালো ফলন হবে বলে তিনি আশাবাদী।