কিশোরীকে জুতাপেটা করেন ‘মানবাধিকারকর্মী’

Looks like you've blocked notifications!
সালিসে উপস্থিত ছিলেন আইয়ুব খান, মুজাম খান (ওপরে বাঁ থেকে), সাবেক কাউন্সিলর সামসুল হক খান ও আকলিমা বেগম (নিচে বাঁ থেকে। ছবি : এনটিভি

‘খারাপ চরিত্র’ আখ্যায়িত করে মাদারীপুরে এক কিশোরীকে জুতাপেটার ঘটনায় সমালোচনা করেছে সচেতন মহল। জুতাপেটায় সরাসরি অংশ নেন মাদারীপুর লিগাল এইড অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি মানবাধিকার ও আইন সহায়তাকারী সংগঠনের তৃণমূল কর্মী।

কিশোরীর পরিবার জানায়, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় সালিসকারীদের ভয়ে আতঙ্কিত তারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়নি। এই ঘটনায় মাদারীপুর মহিলা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের লোকজন কিশোরীর বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন।

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের কাছে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকেলে ওই সালিসে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আইয়ুব খান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজাম খান, সাবেক কাউন্সিলর সামসুল হক খান, স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন লিগাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের তৃণমূল কর্মী আকলিমা বেগম, স্থানীয় প্রভাবশালী সেলিম মীরা, খবির খান। সালিসে আইয়ুব খান, মুজাম খান, সামসুল হক খানের সিদ্ধান্তে ওই কিশোরীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। প্রকাশ্যে ১০ বার জুতাপেটা করা হয়। জুতাপেটায় অংশ নেন মাদারীপুর লিগাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের তৃণমূল সংগঠন কমিউনিটি বেইজড অর্গানাইজেশন (সিবিও) কমিটির সদস্য আকলিমা বেগম।

কিশোরীর বাবা বলেন, ‘প্রভাবশালীরা আমাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা এই ঘটনার সঠিক বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে মাদারীপুরে সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য এম আর মর্তুজা বলেন, আইন কেউই নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। নারী ও শিশুঘটিত এমন ঘটনার মীমাংসা করার ক্ষমতা স্থানীয় সালিসকারকদের নেই। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কঠোর বিচার হওয়া উচিত। মানবাধিকার সংগঠনের সংশ্লিষ্ট যদি কেউ জড়িত থাকে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। মানবাধিকার রক্ষা যারা করবে, তারাই যদি ভক্ষকের ভূমিকায় থাকে, এটা জাতির জন্য অশনিসংকেত।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর লিগাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সমন্বয়কারী খান মো. শহীদ বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা স্থানীয় পর্যায়ে সমাজভিত্তিক কমিটি করে থাকি স্থানীয় লোকজন নিয়ে। এতে যদি কেউ অপ্রীতিকর ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে আমরা তাঁকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করি। ওই কিশোরীর পরিবার যদি আইনগত সহায়ত চায়, আমরা সংস্থার পক্ষ থেকে সহযোগিতার করব।’

মাদারীপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) আবু নাইম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত। এখনো মামলা হয়নি। মামলা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি জানার জন্য মহিলা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তারকে জানানো হয়েছিল। তারা ঘটনা বিস্তরিত শুনেছে। এখন যদি নির্যাতিতার পরিবার মামলা দেয়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘মানবাধিকারকর্মী’ আকলিমা বলেন, তিনি কেবল সালিসের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন।

গত ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে শহরের মধ্য খাগদি এলাকার কিশোরীকে তুলে নিয়ে যান একই এলাকার হাসান শরীফ। পরে মেয়েটিকে তামান্না নামে এক নারীর কাছে বিক্রি করে দেন হাসান। বিষয়টি ওই কিশোরীর পরিবার জানতে পেরে মাদারীপুর সদর উপজেলার খাগছাড়ার করমবাজার থেকে তাকে উদ্ধার করে। পরে মঙ্গলবার বিকেলে বিষয়টি সালিস মীমাংসার নামে প্রকাশ্যে ১০টি জুতাপেটা করা হয়।