গেল বছর পথে ‘চলতে চলতে’ নিহত ২৮০৪

Looks like you've blocked notifications!
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নিয়ন্ত্রণ হারানো একটি ট্রাকের চাপায় নিহত হন লোকমান নামের এক পথচারী। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এই দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি : এনটিভি

সকালে কাজের উদ্দেশে বের হন দিনমজুর আসরাফ উদ্দিন (৪০)। রাজধানীর পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় রাস্তা পার হচ্ছিলেন তিনি। এ সময় মিরপুরগামী একটি বাসের ধাক্কায় নিহত হন আসরাফ উদ্দিন। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

এভাবে ২০১৭ সালে এক হাজার ৯৬৪টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে দুই হাজার ৮০৪ পথচারীর। সড়ক, রেলপথ, নৌ ও আকাশ পথের সব দুর্ঘটনা মিলে যা নিহত হয়েছে, শুধুমাত্র পথচারী মৃত্যুই অর্ধেকের বেশি।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার ৩৪৯টি। যা ২০১৬ সালের তুলনায় এক হাজার ৩৩টি বেশি। ২১০৭ সালে দুর্ঘটনায় নিহত হন পাঁচ হাজার ৬৪৫ জন। আর ২০১৬ সালে এর চার হাজার ১৪৪ জন।

২০১৭ সালে যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের দুর্ঘটনা ঘটায় ৯৬৩টি। আর পণ্যবাহী ট্রাক, মিনি ট্রাক দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে ৯৪১টি। এছাড়া মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনার সংখ্যা ৭২০টি। অপরদিকে, কাভার্ডভ্যান জাতীয় যানবাহন দুর্ঘটনা ঘটায় ১০৭টি।

এদিকে, নসিমন, করিমন, ভটভটি, অটোবাইক, সিএনজি-অটোরিকশা, ইজিবাইক, লেগুনা, টেম্পু, আলমসাধু, মহেন্দ্র, ইঞ্জিন চালিত রিকশা ইত্যাদি অবৈধ যানবাহনের দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬১৮টি।

সামাজিক আন্দোলন নিরাপদ সড়ক চাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। ছবি : এনটিভি

পথচারীর মৃত্যু নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাস্তায় হাঁটা, রাস্তা পারাপার, রাস্তায় ধান-পাট শুকানো, হাট বাজার বসানো, রাস্তার পাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় লোকজন নিয়ম না মেনে চলাফেরা করছে। এজন্য সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পথচারীদের সংখ্যা এত বেশি। দেশের জনগণের মধ্যে সচেতনতা বোধের অভাব রয়েছে, যা বিশ্বের অন্যন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা শতকরা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনার জন্য জাতিসংঘের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কখনোই সম্ভব হবে না, যদি না জনগণকে সচেতন করা যায়।

পথচারী মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিরাপদ সড়ক চাইয়ের চেয়ারম্যান ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গতি সম্পর্কে পথচারী ও চালকদের জ্ঞান কম। আর সচেতনার খুব অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় পথচারী ভাবে, গাড়ির তো একটা ব্রেক আছেই, চালক ব্রেক ধরবেই। কিন্তু এটা ভাবে না, চালক এর পক্ষে গাড়ি থামানো সম্ভব কিনা। খুবই বেখেয়ালিভাবে রাস্তা পার হয়।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়া, গল্প করতে করতে দল বেঁধে রাস্তা পার হওয়া দীর্ঘ দিনের বদ অভ্যাস। অনেক সময় দেখা গেছে, রাস্তায় জটলা করে রোদ পোহায়, আগুন জ্বালিয়ে বসে থাকে। অনেক দিনমজুর মাথায় এত বড় বোঝা নেন, যেকোনো দিক থেকে গাড়ি আসছে বুঝতে পারছেন না। আর চালকদেরও গাড়ি চালনা নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। বাজার হাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনেও গতি না কমিয়ে চালাতে থাকেন তাঁরা। সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।