নেতার বাগানে যেতে পাহাড় কেটে রাস্তা, টাকা দিচ্ছে সরকার

Looks like you've blocked notifications!
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শফি উল্লাহর বাগানে যাওয়ার জন্য সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জুমখোলায় সরকারি অর্থায়নে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। ছবি : এনটিভি

বান্দরবানে পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটের (সলিং) সড়ক। এ জন্য প্রায় দুই কোটি টাকা দিচ্ছে পার্বত্য জেলা পরিষদ। সড়ক নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়ের বালু ও মাটি। অথচ ওই এলাকায় কোনো জনবসতি নেই।

অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের এক সাবেক নেতার বাগানে যেতে নির্মাণ করা হচ্ছে ওই সড়ক! 

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জুমখোলায় নির্মাণ করা হচ্ছে ওই সড়ক। ওই সড়কের সংশ্লিষ্ট বাগানের মালিকের নাম অধ্যাপক শফি উল্লাহ। তিনি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং নাইক্ষ্যংছড়ি সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি।

জানা যায়, সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ওই সড়কের জন্য ব্যয় হবে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা। জনগণের ভ্যাট-ট্যাক্স থেকে পাওয়া ওই অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে জেলা পরিষদ।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চলমান উন্নয়ন কাজটির আশপাশের প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো জনবসতি এবং পাহাড়ি-বাঙালি কারোরই গ্রাম নেই। অধ্যাপক শফি উল্লাহর বনায়ন ও ফলজ বাগান রয়েছে ওই এলাকায়।

জানা যায়, বান্দরবানের পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্যশৈহ্লার ঘনিষ্ঠ এবং ব্যবসায়িক অংশীদার হওয়ায় অধ্যাপক শফি উল্লাহর বাগানে যাওয়ার জন্যই সরকারি অর্থায়নে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় মানুষের আপাতত কোনো কাজেই আসবে না নির্মাণাধীন রাস্তাটি। সোনাইছড়ি জুমখোলা হয়ে সড়কটি পরবর্তী সময়ে চাকঢালার চাথুইপাড়ায় গিয়ে যুক্ত হবে বলে জানা যায়।

ওই উন্নয়ন কাজটির ঠিকাদারও শফি উল্লাহ। গোপন দরপত্রে উন্নয়ন কাজটি পেয়েছে মং বাহাইন আকাশের ‘সাঙ্গু ওয়ে’। কিন্তু কাজটি বাস্তবায়ন করছেন শফি উল্লাহ নিজেই। তাঁর সঙ্গে যুক্ত আছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একনেতার ব্যবসায়িক অংশীদার সুমন দাশ ও এক সময়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের আমিরুল ইসলাম।

নির্মাণকাজে বেশির ভাগ স্থানেই বালুর পরিবর্তে রাস্তায় পাহাড়ের বালু মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। রাস্তা নির্মাণের জন্য দুই পাশের অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এক্সাভেটর দিয়ে অনুমোদন ছাড়াই কাটা হয়েছে পাহাড়ও। সাড়ে তিন কিলোমিটার ইটের (সলিং) রাস্তাটি নির্মাণের জন্য দরপত্রে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে কেবল মাটি কাটার জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।

নির্মাণকাজের শ্রমিক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘রাস্তা নির্মাণকাজের ঠিকাদার শফি উল্লাহ। তাঁর অধীনে ফুটে ছয় টাকা দামে রাস্তায় ইট বিছানো ও বালু দেওয়ার কাজটি করছি।’

সোনাইছড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি বিজয় মারমাসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, নির্মাণাধীন সড়কের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো জনবসতি এবং গ্রাম নেই। তাই বলা যায়, রাস্তাটি জনস্বার্থে করা হচ্ছে না। শুনেছি শফিউল্লাহর বাগান রয়েছে জুমখোলার শেষপ্রান্তে। রাস্তার নির্মাণকাজও তিনি করছেন শ্রমিক দিয়ে।

সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাহান মারমা বলেন, ‘জুমখোলায় সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি সরকারি টাকার অপচয়। সড়কটি আপাতত জনগণের কোনো কাজই আসবে না। ওই এলাকায় কোনো জনবসতি নেই। আশপাশে কোনো গ্রামও নেই। কার স্বার্থে এবং কিসের ভিত্তিতে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে জানি না। আমার কোনো পরামর্শও নেওয়া হয়নি সড়কটি নির্মাণের ব্যাপারে।’

এ ব্যাপারে অধ্যাপক শফি উল্লাহ বলেন, ‘সোনাইছড়িতে আমার সাড়ে তিন একর পাহাড়ি জমি আছে। তবে জুমখোলায় আমার কোনো জায়গা নেই। রাস্তা নির্মাণের কাজও আমি করছি না।’ বলে দাবি করেন।

এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘সোনাইছড়ির জুমখোলায় এক কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। এ প্রতিষ্ঠানে আমি নতুন এসেছি, তাই বিস্তারিত এ মুহূর্তে কিছুই বলতে পারব না।’

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইলে নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।