সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল রাঙামাটিবাসী
পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুম, খুন বন্ধ এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সচেতন নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচির কারণে আজ রোববার সকালেই স্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো রাঙামাটি জেলা শহর। শহরের সব ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে, পরিবহন মালিক শ্রমিকরা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে যোগ দেন কর্মসূচিতে। বন্ধ হয়ে যায় পুরো শহরের সব কার্যক্রম।
বেলা ১১টায় সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক দীপংকর তালুকদারের নেতৃত্বে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল রাঙামাটি শহরের পৌর চত্বর থেকে শুরু হয়ে নিউ মার্কেট চত্বরে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি, রাঙামাটি আসবাবপত্র সমিতি, বনরূপা, রিজার্ভবাজার, তবলছড়ি ব্যবসায়ী সমিতিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়ী, পরিবহন সংগঠনের নেতারা।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলোকে সতর্ক করে দেওয়া হয়, ক্রমাগত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে এর পরিণতি শুভ হবে না এবং ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হবে।
অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে ডাকা এই সমাবেশে রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিপুল সাধারণ মানুষ অংশ নেয়। খণ্ড খণ্ড মিছিলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো শহর। মুহুর্মুহু স্লোগান দেওয়া হয় সন্তু লারমা, উষাতন তালুকদারসহ পাহাড়ের আঞ্চলিক দল ও তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, একাত্তরে পরাজিত শক্তি যুদ্ধাপরাধীদের স্বজনরা এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় আছে, তারাই পাকিস্তানি আইএসের সাথে মিলে পাহাড়কে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অবৈধ অস্ত্রধারীরা শুধু চাঁদাবাজি নয়, অস্ত্রবাজি নয়, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিচ্ছে, স্বাধীন জুম্মল্যান্ডের, পতাকা কী হবে, মুদ্রা কী হবে, এগুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সুতরাং আমরা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে বলব,সতর্ক দৃষ্টি রাখুন এবং যারা এমন দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিন।’
রাঙামাটিতে চাঁদাবাজির বিষয়ে সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘পাহাড়ের অন্যতম অর্থনৈতিক কাজ গাছ ও বাঁশ। প্রতি পারমিটে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা, বাড়তি পাঁচ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। এখন ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে হাওলাদ। শিয়ালের কাছে মুরগি যদি বর্গা রাখি, সেটা কি আর ফেরত পাওয়া যায়?’
সন্তু লারমাকে উদ্দেশ করে দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল অবস্থা। চুক্তি আপনি বাস্তবায়ন চান, আমরাও চাই।
আসুন একসাথে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানাই। আপনিও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে সোচ্চার হোন, সক্রিয় হোন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে কাউকে ধরে আপনি দয়া করে বলবেন না, এরা আমার মানুষ। চাঁদাবাজদের কোনো জাত নাই, অস্ত্রবাজদের কোনো নীতি নাই, এই নীতিহীন আদর্শহীনদের নিয়ে আমরা কেউ কখনো ভালো কাজ করতে পারব না। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে আপনিও শামিল হোন, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিন। তবেই পাহাড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে। নতুবা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কষ্টকর হবে।’
দীপংকর তালুকদার রাঙামাটির সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদারকে ইঙ্গিত করে অভিযোগ করেন, ‘আজকেই (রোববার) সকাল ১০টায় একটি সরকারি অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারদের সাথে সভা করেছেন এবং একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে শতকরা পাঁচভাগ চাঁদা হিসেবে দিতে হবে এবং টাকাগুলো ওই নির্বাহী প্রকৌশলীকে জমা দিতে হবে বলে ঠিকাদারদের জানিয়েছেন। আমি দুর্নীতি দমন কমিশন ও সব গোয়েন্দা সংস্থাকে অনুরোধ করব, ওই নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।’
সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু চাকমা রাণী ইয়েন ইয়েনকে ইঙ্গিত করে বলেন, বিলাইছড়িতে যে ঘটনা ঘটেছে, এটা সত্যি হলে আমরাও এর বিচার চাই, প্রতিবাদ জানাই। এটা নিয়ে অপরাজনীতি করার চেষ্টারও নিন্দা জানাই। তাঁরা দুই কিশোরীকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নিজেদের মতো করে স্টেটমেন্ট নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি জটিল করার চেষ্টা করছেন। আজকে যাঁরা মানবাধিকারের নামে এই দুই কিশোরীকে নিয়ে যেতে চাইছেন, যখন ঝর্ণা খীসাকে মারা গেল তাঁরা তখন কোথায় ছিলেন? এখনো দুই কিশোরীর চিকিৎসক রিপোর্ট পাওয়া যায়নি, দুই কিশোরীর দাদুকে কারা অপহরণ করে আটকে রেখেছে, সেটা বের করতে হবে।
‘যাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি বাঙালির সহবস্থান চান না, তাঁরা ইচ্ছে করলে এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন’ মন্তব্য করে দীপংকর তালুকদার চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে পার্বত্যবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
সমাবেশে বক্তব্য দেন সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক দীপংকর তালুকদার, সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, বনরূপা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু সৈয়দ, বাস লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈনুদ্দিন সেলিম, আসবাবপত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কুর, রিজার্ভবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলালউদ্দিন, তবলছড়ি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা মামুনুর রশীদ, কাপ্তাই ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অংসুই প্রু মারমা, মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার উপদেষ্টা রাসেল মার্মা প্রমুখ।