বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে চাষাবাদ

Looks like you've blocked notifications!
বান্দরবানে ভরাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠটি ঘেরাও দিয়ে দখল করে বাগান চাষ করছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী। স্কুলের সামনে তিন ফুট জায়গাও খালি নেই। ছবিটি গতকাল মঙ্গলবার সকালে তোলা। ছবি : এনটিভি

বান্দরবানের ভরাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে চাষাবাদ করছেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী। বিদ্যালয়ের সামনে তিন ফুট জায়গাও খালি নেই। পুরো মাঠটি দখল করে রাখায় দীর্ঘদিন ধরে খেলাধুলাসহ বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

বিষয়টি শিক্ষা বিভাগ, প্রশাসনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে জানানোর পরও প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে দাবি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির।

ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের ভরাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে ঘেরা বেড়া দিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আবদুল মালেক। মাঠটি এমনভাবে ঘেরাও দিয়ে দখল করে রেখেছে যে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্কুল ভবনের সামনে তিন ফুট জায়গাও খালি নেই, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা অনায়াসে একটু চলাফেরা আর দৌড়াতে পারবে। অথচ স্কুলের নামে ৩০ শতক জমি রয়েছে। জমির একপাশে স্কুল ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। স্কুলের একমাত্র খেলার মাঠটি দখলমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা বিভাগ, প্রশাসনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে একাধিকার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ করেও কোনো ধরনের প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শামসুল আলম বলেন, ‘ভরাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ৩০ শতক জমি রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য জায়গাটি আমি দান করেছিলাম। আমার নামীয় জায়গা থেকে মাঠ দখলকারী আবদুল মালেককে ১০ শতক জমি বিক্রি করেছিলাম। মালেককে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার পরও তিনি নিজের চিহ্নিত জায়গায় না গিয়ে স্কুলের মাঠটি দখল করে নিয়েছেন। কারণ, স্কুলের মাঠটি সমতল এবং সুন্দর। আর মালেকের কেনা জমিটি উঁচু-নিচু ঢালু। এ বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে অভিযোগ করেছি। কিন্তু স্কুলের মাঠটি অবৈধ দখলমুক্ত করতে কেউই এগিয়ে আসেনি।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে স্কুলের মাঠ দখলকারী আবদুল মালেক বলেন, ‘আমি স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শামসুল আলমের কাছ থেকে ১০ শতক জায়গা কিনেছি। কিন্তু উনি আমাকে জায়গাটি এখনো বুঝিয়ে দেননি। তাই আমি স্কুলের মাঠ দখল করে রেখেছি। স্কুলের মাঠ দখল করতে আমারও কোনো ইচ্ছা নাই। আমাকে জায়গাটি বুঝিয়ে দিলে স্কুলের মাঠটি ছেড়ে দেবো।’

ভরাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এমরান ফারুক বলেন, বিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রছাত্রীদের প্রাত্যহিক সমাবেশ এবং খেলাধুলা করার কোনো স্থান নেই। স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার যে মাঠটি আছে, সেটি ঘেরাবেড়া দিয়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে। যে কারণে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা করার জন্য আমাদের অন্য স্কুলের মাঠে যেতে হয়। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা-বিনোদনের জন্য একটি মাঠ প্রয়োজন। আমরা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। বিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ জায়গাটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এখনো নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। বিদ্যালয়ের জায়গাটি নির্ধারণ করে দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের খেলার মাঠের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবীন্দ্র সাহা বলেন, ‘ভরাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য দানকৃত ৩০ শতক জায়গাটি সীমানা নির্ধারণে জটিলতা রয়েছে। যে ব্যক্তি জায়গাটি দান করেছিলেন, তিনি বিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণ করে দেননি। এর ফলে পাশের ব্যক্তি বিদ্যালয়ের সামনের মাঠের জায়গাটি সম্পূর্ণ দখল করে রেখেছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে বিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণের জন্য সদর উপজেলা কর্মকর্তা বরাবর রিপোর্ট পেশ করেছি। বিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণ হলে বিদ্যালয়ের সামনের জায়গাটি দখলমুক্ত করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।