ঠাকুরগাঁওয়ে এরশাদ বললেন

এক ভাগও নির্যাতন খালেদা জিয়ার ওপর করা হয়নি

Looks like you've blocked notifications!
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহ্ম্মদ এরশাদ আজ শনিবার বিকেলে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা ডাকবাংলো মাঠে উপজেলা জাতীয় পার্টি আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেন। ছবি : এনটিভি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের দিন ঘনিয়ে আসায় মামলার প্রধান আসামি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে আবারো বক্তব্য দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘আমার ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছিল, তার একশ ভাগের এক ভাগও তাঁর (খালেদা জিয়া) ওপর করা হয় নাই। আল্লাহর বিচার শুরু হয়েছে। আল্লাহর বিচার আপনি দেখবেন।’

আজ শনিবার বিকেলে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা ডাকবাংলো মাঠে উপজেলা জাতীয় পার্টি আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন এরশাদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, ‘এখন দেশের অবস্থা কী? মানুষ নিরাপদে ঘুমাতে পারে না। এমন আইন করা হয়েছে, সাংবাদিকরা লিখতে পারে না। কথা বলতে পারে না। আমাদের জবান বন্ধ, মুখ বন্ধ। লেখা বন্ধ, কলম বন্ধ। সব বন্ধ। স্বাধীন দেশ, স্বাধীনভাবে লিখব। স্বাধীনভাবে কথা বলব-সেই সুযোগ বাংলাদেশে নাই। আমাদের সমস্ত সুযোগ হরণ করা হয়েছে। আমাদের সমস্ত স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। আমরা পরাধীন জাতি হিসেবে আজ পরিগণিত। তাই এই থেকে মুক্ত করতে হবে। মানুষকে মুক্ত করতে হবে। লিখতে দিতে হবে, পড়তে দিতে হবে। স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।’

ক্ষমতা থেকে সরানোর সাধ্য কারো ছিল না

সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, ‘আমি যদি ক্ষমতায় থাকতে চাইতাম, সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলাম, কারো সাধ্য ছিল না আমাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর। আশা করেছিলাম, তাঁরা (বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা) যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেটা রাখবেন, আমি নির্বাচন করতে পারব। আমার দল নির্বাচন করতে পারবে। তাঁরা তাঁদের কথা রাখেন নাই। ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার ছয় দিন পর আমাকে জেলে দেওয়া হয়েছিল। আমার দলের সব নেতাকে জেলে দেওয়া হয়েছিল। আমার স্ত্রীকে জেলে দেওয়া হয়েছিল। ছয় বছরের সন্তান, তাকে জেলে দেওয়া হয়েছিল। সাত বছরের কন্যাকে জেলে দেওয়া হয়েছিল। তাদের লেখাপড়া নষ্ট হয়ে গেছে। জীবন নষ্ট হয়ে গেছে।

ছয় বছর জেলে ছিলাম একটানা। পৃথিবীতে কোনো নেতা একটানা ছয় বছর জেলে থাকেননি, বঙ্গবন্ধু থাকেননি। অবিচার করা হয়েছে। কী নির্যাতন আমার ওপর করা হয়েছে, সে কথা শুনলে আপনারা কষ্ট পাবেন। রোজার দিনে ইফতার করতে পারি নাই। রোজার দিনে গরম খাবার খেতে পারি নাই। সেহরি করতে পারি নাই। কিন্তু মনের বল হারাইনি। আমি জানতাম, আল্লাহ পাক একদিন মুক্ত করবেন। আমি মানুষের ক্ষতি করি নাই। আমার হাতে রক্তের দাগ নাই। আমি মানুষকে উপকার করেছি। বুকে কাছে টেনে নিয়েছি, মুখে আহার তুলে দিয়েছি। জানি, একদিন না একদিন মুক্ত হবোই।’ বলছিলেন এরশাদ।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি অসুস্থ হয়েছিলাম। আমার স্ত্রী অনশন ধর্মঘট করেছিলেন যে তাঁর স্বামীকে হাসপাতালে পাঠান। বেগম জিয়া বলেছিলেন, উনাকে মরতে দাও ওখানে, উনার চিকিৎসার প্রয়োজন নাই। উনি আরেকবার জনসভায় বলেছিলেন, আমি যখন মুক্ত মানুষ, এরশাদ জীবন্ত জেলখানায় যাবে, লাশ হয়ে ফিরে আসবে।

আমি লাশ হয়ে ফিরে আসি নাই। এই জীবন্ত মানুষ হয়ে শত মানুষের সামনে, লক্ষ মানুষের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছি। আল্লাহর বিচার আছে। বার বার বলি, আল্লাহর বিচার আছে। আমি আল্লাহতে বিশ্বাস করি। আমার ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছিল, তার একশ ভাগের এক ভাগও তাঁর ওপর করা হয় নাই। কিন্তু তিনি আজ ক্ষমতায় নেই। এখন আন্দোলন করেন, কী কী করেন, গাড়ি ভাঙেন। আমরা গাড়ি ভাঙি নাই। আল্লাহর বিচার শুরু হয়েছে। আল্লাহর বিচার আপনি দেখবেন।’

জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা প্রমুখ।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ বলেছেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি সিলেটে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে দোয়া নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ ঠাকুরগাঁও থেকে প্রচারণা শুরু হলো। তিনি দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য লাঙল প্রতীকে ভোট দিয়ে জাতীয় পার্টিকে সরকার গঠনে আহ্বান জানান।

১ ফেব্রুয়ারি সিলেটে মাজার জিয়ারত শেষে এরশাদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করছি রায় শোনার জন্য। আমার বিরুদ্ধে অনেক রায় হয়েছে। উনি আমার বিরুদ্ধে অনেক রায় দিয়েছিলেন। ছয় বছর জেলে ছিলাম, অনেক কষ্ট করেছি। আমার স্ত্রী, পুত্র পরিবার তিন বছর জেলে ছিল। সে জন্য রায় সম্পর্কে আমরা অপেক্ষা করছি, কী রায় হবে। কোর্ট দেবে, আমরা সেটা মেনে নেব। আমার মনে হয়, রায় শোনার পর সবার শান্ত থাকা উচিত। রায়টাকে সবার মানতে হবে। আমরাও মেনেছি।’

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের দিন ধার্য রয়েছে।