চুক্তির পরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার প্রবেশ

Looks like you've blocked notifications!
রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছবিঃ সংগৃহীত

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা  স্মারক সই হয় গত নভেম্বরে। কবে নাগাদ এই প্রত্যাবাসন শুরু হবে তা নিশ্চিত না হলেও থামছে না রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও সরকারের দেওয়া তথ্যমতে চুক্তির পর বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা। আর শুধুমাত্র গত ৪০ দিনে বাংলাদেশে এসেছে ১০ হাজার রোহিঙ্গা।

এদিকে, কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) তথ্য মতে, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৯০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে।

চুক্তির দুই মাসের মাথায় প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মিয়ানমারের নানা শর্তের মুখে পড়ে পিছিয়ে যায় এ প্রক্রিয়া।

এদিকে, চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতায় সেই চুক্তির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা যা জেনেছি, প্রায় ১০ হাজার এসেছেন গত ৪০ দিনে। গত কয়েক দিনেও ৩০০, ৪০০ করে এসেছেন। নৌকা্ডুবি হয়ে শিশুও মারা গেছে পরশু দিন। কিন্তু তাঁরা আসছেন মূলত, ওখানকার কিছু অথোরিটি, লোকাল ডিফেন্সের লোকজন মিলে বলছে যে বাকিরা বাংলাদেশ চলে গেছে, তোমরাও চলে যাও। আবার অনেকে আসছেন, ফ্যামিলিকে খুঁজতে, তাদের হারিয়ে যাওয়া মানুষজনকে। তবে এটা আগের তুলনায় মোটেই অত বেশি কিছু নয়। এদের জন্যে আমরা খুব বেশি চিন্তিত নই। কিন্তু অবশ্যই প্রত্যাবাসন যখন শুরু হবে, তারপরেও যদি আবার আসতে থাকে, তাহলে আমাদেরকে সেটা সিরিয়াসলি ভাবতে হবে।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অফিসের কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, ‘প্রতিদিনই লোক আসছে। সংখ্যা অনেক কমেছে, আগের চাইতে। এখন আগের মতো হাজারে হাজারে আসছে না। প্রতিদিন ১৫০, ২০০, ২৫০ লোক আসছে। লোক আসা বলতে গেলে এখনো বন্ধ হয়নি। বলা ছিল যে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারের নাগরিকদের দেশে প্রবেশের জন্যে পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু আমরা বাস্তবতার প্রতিফলন দেখতে পাইনি।’

মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তিতে অনেক শর্তের মধ্যে তাঁরা রোহিঙ্গাদের পরিবারভিত্তিক একটি তালিকা তৈরির কথা জানায়।

এই তালিকা তৈরির বিষয়ে আবুল কালাম বলেন, ‘তালিকাটি প্রণয়নের কাজ চলছে। আপনি জানেন যে ইতিমধ্যেই আমাদের বহিরাগমনের পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মাধ্যমে যে বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশনের কাজ চলছে। তাঁর আওতায় ১০ লক্ষেরও বেশি ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে, বায়োমেট্রিক ইম্প্রেশনসহ। কিন্তু এই তালিকাটি করা হয়েছে ব্যক্তি ভিত্তিতে। এখানে পরিবার ভিত্তিতে দেখা হচ্ছে না। কিন্তু প্রত্যাবাসনের জন্যে আমাদের যে তালিকা দেওয়া লাগবে, সেটি হতে হবে পরিবারভিত্তিক।  সুতরাং, আমার যে তথ্য আছে, বহিরাগমন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের হাতে, সেই তথ্য থেকে আমরা আসলে পরিবার ভিত্তিক তালিকা তৈরি করতে পারছি না। এর পাশাপাশি আমরা ইউএনএইচসিআরের (জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার) সহায়তায়, আমার অফিস থেকে, একটি পরিবার গণনা কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলাম। তো সেখানে কতগুলি পরিবার রয়েছে, সেটি নির্ধারণ করা হয়েছে, জরিপ করা হয়েছে। তাদের অন্য কিছুর তথ্যও আছে, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, মিয়ানমারে তাদের বাড়িঘর কোথায়,এই ধরনের তথ্য সেখানে আছে।’

আবুল কালাম আরো বলেন, ‘এখন আমরা এই দুই উৎস থেকে যেই তথ্য পাচ্ছি, এই দুটোর মধ্যে সংযোগ করে, একটি পরিবারভিত্তিক তালিকা তৈরির ওপর হাত দিয়েছি। এটা অগ্রসর হয়েছে। এখন আশা করছি যে, হয়তো আরো দুই তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে এটি শেষ হতে। কারণ বিশাল সংখ্যার লোক এখানে। কিন্তু একই সাথে এই তালিকাটি আমরা, ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতায় ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে একটা চুক্তি হয়েছে। একটা সমঝোটা স্মারক হওয়া দরকার। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করি দুই চারদিনের মধ্যেই সেটি চূড়ান্ত হবে। এটি হয়ে গেলেই আমরা পরিবারভিত্তিক তালিকা পেয়ে যাব।’

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে জাতিসংঘের ওপর বাংলাদেশকে চাপ সৃষ্টির কথা বলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

কাজী রিয়াজুল হক বলেন,‘ওরা ওখানে গেলে আবার যে ওদের ওপর নির্যাতন হবে না (তা বলা যাচ্ছে না), ওদের যুক্তির সাথেও তো একমত। এই নিরাপত্তা তো তাদের দিতে হবে। এজন্য বাংলাদেশকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে জাতিসংঘের ওপরে। জাতিসংঘ থেকে, তাদেরকে ওইখানে জাতিসংঘের টাস্কফোর্স আছে তাঁরা ওইখানে নিরাপত্তা দিবে। জাতিসংঘ বিভিন্ন দেশে নিরাপত্তার কাজ করছে। মানুষের যে মৌলিক অধিকারগুলো আছে, মৌলিক অধিকারগুলো থেকে তাদেরকে বারবার বারবার করে বঞ্চিত করা হয়েছে। তো এই মৌলিক অধিকারগুলো তো তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে না।’

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিয়ানমার সেনা ও পুলিশ নানা নির্যাতন চালিয়ে তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে। ক্ষেতের ফসল লুট ও খাদ্য সংকট তৈরির কথাও জানান তাঁরা।