একরাম হত্যা : ৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, বিএনপি নেতা খালাস

Looks like you've blocked notifications!

ফেনী ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যা মামলায়  আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৩৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে বিএনপি নেতা মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনারসহ ১৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক এ  রায়  ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

আদালত সূত্র জানায়, দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে ফেনী কারাগার থেকে ৩৬ জন আসামিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে বিচারক রায় পড়া শুরু করেন। বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে রায় পড়া শেষ করেন। ফাঁসির দণ্ড পাওয়া ৩৯ জনের মধ্যে নয়জন পলাতক। দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

এ মামলার ১৯ জন আসামি পলাতক। এদের মধ্যে ১০ জন জামিনে গিয়ে পালিয়ে গেছেন এবং নয়জন শুরু থেকেই পলাতক। মামলায় ৫৬ জনের বিরুদ্ধে  অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আসামি সোহেল জামিনে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর ২০১৭ সালের ৩ জুলাই র‍্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।

হত্যাকাণ্ডের ১০০ দিনের মাথায় ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের  যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল আলম মিস্টারের নাম। একই বছর ১২ নভেম্বর অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত।

এ মামলায় ৫৯ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ৫০ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। ৫৬ আসামির মধ্যে ১৬ জন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এদের মধ্যে হেলাল উদ্দিন নামে একজন পরে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন।

মামলার সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহম্মদ জানান, মামলার সাক্ষীরা একরামুল হক একরামের গাড়ির গতিরোধ, গুলি ,কুপিয়ে ও গাড়িতে আগুন দিয়ে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তিতর্কে নির্দোষ দাবি করেন। 

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২০ মে সকালে ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরামকে কুপিয়ে, গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যা করেন আসামিরা। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ায় একরামের লাশ তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় দেহাবশেষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিএনএ টেস্টের জন্য পাঠানো হয়। সেখানে একরামের লাশ শনাক্ত করা হয়। রাতেই লাশ ফেনীতে একরামের মাস্টারপাড়ার বাসায় নিয়ে আসা হয়। পরদিন ফেনী মিজান ময়দানে প্রথম জানাজা এবং পরে  আনন্দপুর স্কুল মাঠে  দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার আনন্দপুর গ্রামের বাড়ির সামনে দাফন করা হয়। হত্যার প্রতিবাদে ফুলগাজী উপজেলাবাসী হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভসহ লাগাতার বিভিন্ন কমর্সূচি পালন করে।

আরো জানা যায়, ঘটনার পরপর ২০ মে রাতে  পুলিশ শহরের বিরিঞ্চিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ২৩ জনকে আটক করে। পরে ২১ জনকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখান থেকে দুজনকে একরাম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ভিডিও ফুটেজের দেখে ২৩ মে রাতে র‍্যাব ঢাকার উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একরাম হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে  আটজনকে আটক করে। পরে তারা র‍্যাবের কাছে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। ফেনী থানা পুলিশ তাদের ঢাকা থেকে ফেনী নিয়ে এসে ২৫ মে রাতে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করে। রিমান্ডে থাকা আসামিদের দেওয়া জানাজানি হয়ে গেলে ফেনী পৌরসভার কাউন্সিলর আবদুল্লা হিল মাহমুদ শিবলু স্বেচ্ছায় থানায় আত্মসমপর্ণ করেন। একই সময়ে জাহিদ চৌধুরী আত্মসমপর্ণ করার পর তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপির জেলা তাঁতী দলের  আহ্বায়ক এবং ফুলগাজী উপজেলা নির্বাচনে একরামের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনারকে ২৬ জুলাই রাতে ঢাকায় ডিবি পুলিশ মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ফেনী পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

একরাম হত্যার ঘটনায় একরামের ছোট ভাই রেজাউল হক জসিম বাদী হয়ে বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনারসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৩৫-৪০ জনকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন।