মায়ের কথা রাখলেন রিমন, তবে লাশ হয়ে

Looks like you've blocked notifications!
ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে এস এম মাহমুদুর রহমান রিমনের পরিবারের সদস্যদের আহাজারি। ছবি : স্টার মেইল

কথা দিয়েছিলেন রিমন। খুব দ্রুতই দেখতে আসবেন মাকে। এলেনও। কিন্তু মাকে আর দেখা হলো না, মা বলে ডাকা হলো না তাঁর। বরং মাকেই দেখতে হলো রিমনের নিথর, নীরব দেহ।

গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন এস এম মাহমুদুর রহমান রিমনও (৩২)। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়ায় তাঁর গ্রামের বাড়ির আঙিনায় চতুর্থ জানাজা শেষ হয়। এরপর দাফন করা হয় দানেশমান বাগদাদী মাজার শরিফে তাঁদের পারিবারিক কবরস্থানে।

শেষ বার রিমন বাড়িতে এসেছিলেন জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে। চলে যাওয়ার সময় মাকে বলে গিয়েছিলেন, খুব দ্রুত আবার মাকে দেখতে আসবেন। কিন্তু উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় তাঁর আর ফিরে আসা হলো না।

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া গ্রামে আজ মঙ্গলবার রিমনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : এনটিভি

এদিকে ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছে রিমনের পুরো পরিবার। পরিবারের বড় ছেলেকে নিয়ে তাঁদের সব স্বপ্নই যেন ফিকে হয়ে গেল এক নিমিষেই।

আজ রিমনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। ছেলের শোকে  বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন মা লিলি বেগম। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন একমাত্র ভাই রুপম। কান্না নেই চোখে, চুপচাপ বসে আছেন বাবা মশিউর রহমান।

রিমনের পরিবার জানায়, ঢাকায় রানার অটোমোবাইলস কোম্পানিতে সিনিয়র ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন রিমন। প্রতিষ্ঠানের কাজে আরো দুই সহকর্মীকে নিয়ে নেপাল যাচ্ছিলেন তিনি।

​ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া গ্রামের বাড়িতে রিমনের মা-বাবার পাশে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওসহ অন্যরা। ছবি : এনটিভি

দুই ভাইয়ের মধ্যে রিমন বড় ছিলেন বড় সন্তান। ছয় বছর আগে তিনি বিয়ে করেন। রিমন তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকার নিকুঞ্জে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।

এর আগে ঢাকা থেকে আজ ভোর সোয়া ৪টায় লাশবাহী গাড়িতে করে রিমনের লাশ তাঁর নিজ বাড়িতে পৌঁছায়। মুহূর্তে আত্মীয়-স্বজন আর প্রতিবেশীদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। এ সময় পরিবারের কাছে সমবেদনা জানাতে হাজির হন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া, নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বদরুজ্জোহা শুভসহ অনেকেই।

গত ১২ মার্চ ৬৭ জন যাত্রীসহ ৭১ জন আরোহী নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হয় ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুপুরে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। এতে বাংলাদেশের ২৬ জন যাত্রী নিহত হয়। এদের মধ্যে ২৩ বাংলাদেশির লাশ শনাক্ত হয়েছে যা নেপাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয় গতকাল সোমবার বিকেলে। এরপর ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে এক সঙ্গে সবার জানাজা হয়। জানাজা শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।