পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি ফুলের চাষাবাদ শুরু

Looks like you've blocked notifications!
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি জাতের ফুলের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। উদ্যোগটি হাতে নিয়েছে মেটাল এগ্রো লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ছবি : এনটিভি

ফুল ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। শুভেচ্ছা জানাতে, ঘরবাড়ি সাজাতে, এমনকি নিজেকে সাজাতেও ফুলের কোনো বিকল্প নেই। তবে আর সবকিছুর মতো ফুলের চাহিদার ক্ষেত্রেও মানুষের রুচিতে এসেছে বিশাল পরিবর্তন। মানুষ এখন ঝুঁকছে বাহারি রঙের বিদেশি ফুলের দিকে। ফলে চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হচ্ছে বিদেশি ফুল।

তবে আমদানি নির্ভরতা কমাতে এরই মধ্যে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি জাতের ফুলের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। মেটাল এগ্রো লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই উদ্যোগ নিয়েছে। শুরুতেই তারা দেবীগঞ্জের নগর চেংঠীহাজরাডাঙ্গা ইউনিয়নের কাউয়াপুকুর গ্রামের ৪০ একর জমিতে দেশি ফুলের পাশাপাশি প্রায় ১২০ প্রজাতির বিদেশি ফুল চাষাবাদ শুরু করেছে। এরই মধ্যে জাপানের টাকি সিড থেকে বীজ এনে ৫০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ডাইয়েনতাস, এস্টার, মেথিউলা, এন্টিরিনাম, কেবেজকাট ফ্লাওয়ার, স্যালভিয়া, ভিইওলাসহ ১২০ প্রজাতির বিদেশি ফুল চাষ করা হয়েছে। বিদেশি এসব জাতের ফুলের চাষ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে নার্সারি মালিক ও ফুলচাষিদের নিয়ে সম্প্রতি কাউয়াপুকুর গ্রামে মেটাল এগ্রো লিমিটেডের খামারে মাঠ প্রদর্শনী ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইউএসএআইডির অনিরুদ্ধ হোম রায়, ডিএআইয়ের মি. বনি আমিন, জাপানের টাকি সিডের প্রতিনিধি নোরিকাজু সাতোইওসি, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও ফুল বিশেষজ্ঞ ড. হেইদি ওয়ারনেট, মেটাল এগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিদ জামিলসহ যশোর, রাজশাহী, নাটোর, বরিশাল, রংপুর, বগুরা, ঝিনাইদহ, কুমিল্লা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, কক্সবাজার ও সিলেট জেলার নার্সারি মালিক, ফুলচাষি, সাংবাদিকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নার্সারি মালিক ও ফুলচাষিরা জানান, বিদেশি ফুল চাষ ও সংরক্ষণে আধুনিক পদ্ধতি এবং কৌশলগত প্রকৃত জ্ঞানের অভাব, সুষ্ঠু বাজারজাতকরণে পরিবহন সমস্যা, বিক্রয়কেন্দ্র ও হাটবাজারের সমস্যা, কোল্ডস্টোরেজের অভাব, ফুলচাষে সারের পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাব, মূলধন সমস্যা, পাইকারি বাজার না থাকা, মানসম্মত ও উন্নতজাতের বিদেশি ফুলের অপর্যাপ্ত আমদানি, বাণিজ্যিক ফুল উৎপাদনের জন্য প্রারম্ভিক খরচ ও পর্যাপ্ত ঋণের অপর্যাপ্ততা ও এলসির মাধ্যমে বিদেশ থেকে ফুলবীজ আনা বিদেশি ফুল চাষের প্রতিবন্ধকতা। এসব সমস্যা সমাধানে মেটাল এগ্রো লিমিটেড কর্তৃপক্ষ সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। সহযোগিতা পেলে চাষিরা ব্যাপকভাবে বিদেশি ফুল চাষাবাদে এগিয়ে আসবেন।

মেটাল এগ্রো লিমিটেডের পরামর্শক ও ফুল বিশেষজ্ঞ হেইদি ওয়েরনেট জানান, বাংলাদেশের ফুলের সম্ভাবনাময় একটি বাজার রয়েছে। কিন্তু এখানে ফুলের বেশি একটা জাত নেই। বর্তমানে যশোর, চট্টগ্রাম ও সাভারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল চাষ করা হচ্ছে, যা যথেষ্ট নয়। বাজারে গেলে আমরা গোলাপ, জবা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ মাত্র কয়েক প্রকারের ফুল দেখতে পাই। অথচ বিশ্ববাজারে অনেক ফুল আছে। কৃষকরা ফুল চাষ করলে বিদেশি ক্রেতারা এখানে এসে ফুল কিনবেন। দীর্ঘদিন শীত থাকায় উত্তরাঞ্চল ফুল চাষের উপযোগী জায়গা। আশা করি অল্প সময়েই বাংলাদেশে ফুলের বাজার সৃষ্টি হবে। ভবিষ্যতে দেশি চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হবে বাংলাদেশে উৎপাদিত বিদেশি জাতের ফুল।

মেটাল এগ্রো লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক আফজাল হুসাইন বলেন, ‘বাংলাদেশে ফুলের সম্ভাবনাময় একটি বাজার রয়েছে। আমাদের দেশে ফুলের বেশি একটা জাত নেই। বাজারে গেলে আমরা গোলাপ, জবা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ মাত্র কয়েক প্রকারের ফুল দেখতে পাই। অথচ বিশ্ববাজারে অনেক ফুল আছে। নন্দিনী, সিলভিয়াসহ বিশ্বে অনেক প্রকার ফুল আছে। আমরা এ সব ফুল বাংলাদেশে আনতে চাই। এরই মধ্যে জাপান থেকে অনেক ফুলের বীজ এনেছি। এখানে প্রায় ১২০ প্রজাতির ফুল প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই ফুলের চাষ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফুল চাষ ছড়িয়ে দিতে চাই।

আফজাল হুসাইন বলেন, দীর্ঘদিন শীত থাকায় উত্তরাঞ্চল ফুল চাষের উপযোগী জায়গা। এ অঞ্চলটি ফুল চাষের উপযোগী স্থান। এ জন্য আমরা নার্সারি মালিক ও কৃষকদের আমাদের খামারে নিয়ে আসছি। কৃষকরা ফুল চাষ করলে বিদেশি ক্রেতারা এখানে এসে ফুল কিনবেন। আগামী জুলাই-আগস্ট মাস থেকে পঞ্চগড়, রংপুর, বগুড়া, ঝিনাইদহ, বরিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা, কক্সবাজার ও সিলেট থেকে বীজ ও চারা সরবরাহ করা হবে এবং ফুল বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

মেটাল সিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিদ জামিল বলেন, ‘আমরা মূলত শাকসবজি ও ধানবীজের ব্যবসা করে থাকি। এবার আমরা ফুলবীজের ব্যবসা শুরু করেছি। বাংলাদেশে ফুলের বিশাল মার্কেট রয়েছে। বাংলাদেশ চীন ও মালয়েশিয়া থেকে ফুল আমদানি করে থাকে। এখন আমাদের দেশে শুধু শীতকালে ফুলের চাষ হয়ে থাকে। কৃষকরা ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে অনেক সময় লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, গ্রীষ্মকালেও যেন ফুল চাষ করা যায়। তাহলে কৃষকরা সারা বছর ফুলের আবাদ করে অনেক লাভবান হতে পারবেন। আমরা জাপানের টাকি সিড থেকে ফুলের বীজ আনছি। আমাদের খামারে নার্সারি মালিক ও কৃষক ভাইরা এসেছে। তারা নিজেরা ফুল চাষ করার জন্য আমাদের বীজের অর্ডার দিচ্ছেন। আমরা আশা করছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে উৎপাদিত ফুল নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ব বাজার জয় করবে। আমাদের এখানে দেশি ও বিদেশি সব ধরনের ফুল, চারা ও বীজ উৎপাদন করব। বাংলাদেশের সমস্ত কৃষকের কাছে আমরা এসব ছড়িয়ে দিতে চাই। কৃষক পর্যায়ে ফুল চাষ ছড়িয়ে দিতে আমরা কাজ করছি। এতে কৃষকরা যেমন লাভবান হবে, তেমনি বিদেশ থেকে ফুল আমদানি নির্ভরতা কমবে। ভবিষ্যতে আমরা বিদেশে ফুল রপ্তানি করতে পারব।’