‘কুঁড়িয়ে পাওয়া ওড়না ফেরত দিতে গিয়ে’ মা-মেয়ের জেল

Looks like you've blocked notifications!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় মা ও মেয়েকে সাতদিনের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ওই পরিবারের অভিযোগ, কুঁড়িয়ে পাওয়া একটি ওড়না ফিরিয়ে দিতে গেলে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী বাইন হীরা ও তাঁর গোপনীয় সহকারী মো. কামরুল ইসলাম বিনা অপরাধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের জেল দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

তবে ইউএনও এবং তাঁর গোপনীয় সহকারী বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেছেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মা-মেয়েকে এই সাজা দেওয়া হয়।

পরিবারটি জানায়, ওই পরিবারের ১১ বছর বয়সী মেয়ে নিপা উপজেলার পাশেই একটি স্কুলে পড়ে। সেই কারণে বিভিন্ন সময়ে উপজেলা সদরে যায় নিপা। এ ছাড়া নিপার বোন কল্পনা ও মা রাজিয়া বেগম উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তার বাসায় কাজ করেন। কয়েকদিন আগে উপজেলার কর্মকর্তাদের গেজেটেড কোয়ার্টারের পাশেই একটি ওড়না পড়ে থাকতে দেখে সেটি নেয় নিপা। এনে দেয় বোন কল্পনাকে।    রোববার ওই ওড়না পরে কল্পনা আশুগঞ্জ বাজারে গেলে উপজেলার একাডেমিক সুপারভাইজার রোকসানা পারভীন সেটি দেখতে পেয়ে ওড়নাটি তাঁর বলে দাবি করেন।

এর পরের দিন সোমবার দুপুরে ওড়নাটি ফেরত দিতে গেজেটেড কোয়ার্টারে যান নিপা, কল্পনা ও তাদের মা রাজিয়া বেগম। পরে সেখানে রোকসানা পারভীনের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় রোকসানা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের গালি দেন বলে অভিযোগ করে এই পরিবার।

একপর্যায়ে এই বাগবিতণ্ডা হাতাহাতিতে পৌঁছায়। এরপর লোকজন নিয়ে মা ও দুই মেয়েকে ধরে ইউএনওর কার্যালয়ে গোপনীয় সহকারী মো. কামরুলের কাছে নিয়ে যান। এ সময় কামরুল বিষয়টি নিয়ে একটি অভিযোগ দিতে বলেন রোকসানা পারভীনকে। পরে রোকসানা ইউএনও বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

পরে সন্ধ্যায় ওই অভিযোগের কোনো সত্যতা যাচাই না করেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনও মৌসুমী বাইন হীরা মা রাজিয়া ও তাঁর মেয়ে কল্পনাকে সাতদিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন বলে পরিবারটি অভিযোগ করে।

এদিকে এই ঘটনা অস্বীকার করেছেন ইউএনও মৌসুমী বাইন হীরা, একাডেমিক সুপারভাইজার রোকসানা পারভীন এবং ইউএনওর গোপনীয় সহকারী কামরুল ইসলাম। তাঁদের দাবি, চুরি করার সময় মা-মেয়েকে হাতেনাতে ধরে ইউএনওর কার্যালয়ে হাজির করা হয়। এ সময় লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের প্রত্যেককে সাতদিনের সাজা দেওয়া হয়। নিপা ১৮ বছরের কম বয়সী হওয়ায় মানবিক কারণে তাকে ক্ষমা করা হয় বলেও তাঁরা জানান।

এদিকে, কল্পনার ভাই শফিকুল ও শাহজাহান অভিযোগ করে বলেন, তাঁদের বোন ও মা চুরি করেননি। তাঁদের ছোট বোন নিপা ওড়নাটি উপজেলায় কুঁড়িয়ে পেয়ে কল্পনাকে দিয়েছিল দুদিন আগে। চুরির কোনো প্রকার সত্যতা যাচাই না করে তাদের মা ও বোনকে সাতদিন করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

শফিকুল ও শাহজাহান বলেন, তারা গরিব মানুষ। আপিল করার কোনো সামর্থ্য তাদের নেই। এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে গোপনীয় সহকারী কামরুল তাঁদের বাইরে কারো সঙ্গে কোনো কথা বলতে নিষেধ করেন।

এ ব্যাপারে ইউএনওর গোপনীয় সহকারী মো. কামরুলের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি এই বিষয়ে সংবাদ না করার জন্য বলেন। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

জানতে চাইলে একাডেমিক সুপারভাইজার রোকসানা পারভীন বলেন, ‘সোমবার দুপুরে নিপা, কল্পনা ও তাদের মা রাজিয়া বেগমকে আমার কোয়ার্টারে দেখতে পাই। এ সময় তাদের ওড়নাসহ ধরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গোপনীয় সহকারীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আমি তাদের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কল্পনা ও তার মা রাজিয়াকে সাতদিন করে সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।’

ইউএনও মৌসুমী বাইন হীরা বলেন, ‘সোমবার বিকেলে একাডেমিক সুপারভাইজার রোকসানা পারভীনের বাসা থেকে থ্রি পিসসহ ওড়না চুরি ও তাঁর সঙ্গে হাতাহাতির অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিপার মা রাজিয়া বেগম ও বড় বোন কল্পনা বেগমকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাতদিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের থানা পুলিশের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’