রাজশাহীতে ড. মোশাররফ

কোটা আন্দোলনের মতোই মানুষ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজ রোববার বিকেলে রাজশাহী নগরীর ভুবন মোহন পার্কে দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। ছবি : এনটিভি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আন্দোলনের মাধ্যমে কোটা পদ্ধতির দাবি আদায়ের মতোই এ দেশের মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে।  খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রের মুক্তি একই সূত্রে বাঁধা।

আজ রোববার বিকেলে রাজশাহী নগরীর ভুবন মোহন পার্কে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য এ কথা বলেন খন্দকার মোশাররফ। 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমরা কেউ জানতাম না, হঠাৎ করে একটা আন্দোলন হলো। কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্ররা রাস্তায় নেমে গেল। আন্দোলনের তোড়ে শেখ হাসিনা কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে বাধ্য হলেন। আগামী দিনে গণতন্ত্রের আন্দোলন, জনগণের অধিকারের আন্দোলনও সেই রকম হবে। জনগণ যখন রাস্তায় নামবে, তখন তারা খালেদা জিয়াকেও এভাবেই মুক্ত করবে। সেই আন্দোলনে রাজশাহীবাসীকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

আগামীতে বিএনপি ছাড়া এ দেশে কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া সেটা হতে পারে না। তাই খালেদা জিয়াকে ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি রাখার প্রতিবাদে রাজশাহী বিভাগীয় এই সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি রাসিক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বরকত উল্লাহ বুলু ও ব্যারিস্টার আমিনুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, জয়নুল আবদীন ফারুক, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু ও কর্নেল (অব.) এম এ লতিফ, যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত খালেক, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা, জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপু প্রমুখ।

সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর কারণে তিনি সমাবেশে যোগ দিতে পারেননি।

তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার  মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপির মতো বড় একটি দলের সমাবেশ এই ছোট জায়গায় করা সম্ভব নয়। সরকার ছোট জায়গা দিয়ে আমাদের সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু পুরো রাজশাহী শহর সমাবেশে পরিণত হয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, খালেদা জিয়া, ২০ দল ও বিএনপি নেতাদের বাইরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে চায় এই সরকার। কারণ তারা জনগণকে ভয় পায়। তারা ক্ষমতায় এসে শেয়ার বাজার লুট করে মানুষকে পথে বসিয়েছে। আজকে ১০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকায় মোটা চাল কিনতে হচ্ছে। জনগণের ওপরে শেখ হাসিনার কোনো আস্থা ও বিশ্বাস নেই। তাই সমাবেশে হাত উঁচিয়ে তিনি নৌকায় ভোট চান।

গণতন্ত্রের মুক্তি মানেই খালেদা জিয়ার মুক্তি উল্লেখ করে ড. মোশাররফ বলেন, খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেই গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। আজকে যদি নিরপেক্ষ ভোট হয়, তাহলে আওয়ামী লীগকে জনগণ আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে। সেজন্য শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ভয় পায়, জনগণকে ভয় পায়।

আগামী নির্বাচনে বিএনপি ছাড়া এ দেশে কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। তাই আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া সেটা কি হতে পারে? এ সময় জনগণ ‘না’ সূচক উত্তর দেয়। তখন ড. মোশাররফ বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া এ দেশে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
জনগণের ভোগান্তি
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে নগরীর মূল চারটি পয়েন্ট ব্লক করে দিয়েছিল পুলিশ। এতে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার, মালোপাড়া, গণকপাড়া, রাণীবাজার প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। যানবাহনগুলো মূল সড়ক দিয়ে ঢুকতে না পেরে অনেক ঘুরে বিকল্প পথ দিয়ে চলাচল করেছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। 

দুপুরে সমাবেশ শুরুর পর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সমাবেশস্থল ভুবনমোহন পার্কে যাওয়ার প্রবেশপথ রাণীবাজার বাটার মোড় এলাকায় ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ। ফলে এই সড়ক দিয়ে সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। 

অন্যদিকে জামাল সুপার মার্কেট থেকে মনিচত্বর পর্যন্ত সড়কও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এতে কুমারপাড়া ও বিপরীতে থাকা সোনাদীঘির মোড় থেকে যানবাহনগুলোকে ঘুরে যেতে হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরে সদর হাসপাতালের মোড় থেকে মালোপাড়া পুরাতন পুলিশ ফাঁড়ি সংযোগ সড়কটিতেও যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে সরকারি মহিলা কলেজ সড়ক থেকে গ্রেটার রোডের দিক থেকে আসা যানবাহনগুলোকে ঘুরে যেতে হয়েছে। এভাবে সমাবেশকে ঘিরে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজারসহ মধ্যশহর কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের সহকারী কমিশনার হোসেন সোহরাওয়ার্দী জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে দফায় দফায় মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসে নেতাকর্মীরা। এতে এমনিতেই যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয়। এ ছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে সমাবেশস্থলের আশপাশের সংযোগ সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। সমাবেশ শেষ হতেই সড়কগুলো আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে।