‘রাজীব ভাই চেয়েছিল নিজেও বড় হবে, আমাদেরও বড় করবে’

Looks like you've blocked notifications!
নিহত রাজীবের ছোটভাই বাপ্পী ও হৃদয়। ছবি : এনটিভি

রাজধানীতে দুই বাসের রেষারেষিতে ডান হাত হারানো রাজীব হোসেনকে বটবৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করেছে তার ছোট ভাই অষ্টম শ্রেণির ছাত্র বাপ্পী। সেই বটবৃক্ষের মৃত্যুতে আরেক ছোট ভাই হৃদয়কে নিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে বলেও জানায় সে।

আজ বুধবার সকালে পটুয়াখালীর উপজেলা সদরের দাসপাড়ায় নানা লাল মিয়ার বাড়িতে রাজীবকে দাফন করা হয়। এরপর সাংবাদিকদের এসব কথা বলে রাজীবের ভাই বাপ্পী।

বাপ্পী বলে, ‘আসলে আমাদের বড় ভাই রাজীব, তাঁর স্বপ্ন ছিল সে নিজে বড় হবে সাথে সাথে আমাদেরও বড় করবে। আসলে মা-বাবা না থাকার কারণে সে অনেক কষ্ট করে বড় হইছে। সে চাইছিল যাতে আমরা সেই কষ্টটা না ভোগ করি। সে চাইছিল যে তার নিজের জীবনটা গড়বে সাথে আমাদের জীবনটাও গড়বে। এই চিন্তা নিয়ে সে নিজে পড়ালেখা করত পাশাপাশি টিউশনি করত। পার্টটাইম জব করে সে আমরা যেখানে পড়ি আমাদের খরচ বহন করত। আসলে সে আমাদের বটগাছ ছিল। আমাদের আশ্রয়স্থল ছিল। আমরা সরকারের কাছে এখন একটি দাবি জানাব সেটি হলো আমাদের আশ্রয়স্থল ঢাকায় যাতে একটি আশ্রয়স্থল দান করে যাতে আমরা ওখানে থাকতে পারি, ওখানে পড়ালেখা করতে পারি।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে যখন বাপ্পী নিজেদের কষ্টের কথা বলছিল তখন তার পাশেই ছোট ভাই ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র হৃদয় ছিল নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে।

রাজীবের জানাজায় অংশ নেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতিবিদ হিসেবে যতটুকু সহযোগিতা দেওয়া দরকার দিয়েছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে, তিনি আসলে নিশ্চয়ই তার পরিবারকে আরো যথেষ্ট সহযোগিতা দেওয়ার সুযোগ আছে এবং থাকবে এবং আমরা করব।’

শুধু রাজনীতিবিদরাই নন, ভাই হারানো বাপ্পী আর হৃদয়ের পাশে এসে দাঁড়াতে চেয়েছেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও। শেষ পর্যন্ত কার কতটুকু সহযোগিতায় অসহায় এই দুই ভাই পায়ের নিচে মাটি পাবে- এখন সেটাই সবার চিন্তা।

গত ৩ এপ্রিল বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন রাজধানীর মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন। ওই সময় তাঁর ডান হাতটি বাসের সামান্য বাইরে ছিল। হঠাৎই পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসের গা ঘেঁষে ওভারটেক করার সময় রাজীবের ডান হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পথচারীদের সহায়তায় তাঁকে দ্রুত শমরিতা হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

গত সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজীব মারা যান। পরে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বিকেলে পটুয়াখালীর উদ্দেশে রওনা হয় রাজীবের লাশবাহী গাড়ি।

রাজীবের পরিবারের সদস্যরা জানায়, বাউফল উপজেলার ইন্দ্রকূল গ্রামে রাজীবের জন্ম এক দরিদ্র পরিবারে। খেটে খাওয়া বাবার আয়ে টানাপড়নে চলত রাজীবদের সংসার। মা নাসিমা বেগম মারা যান ১৫ বছর আগে আর বাবা হেলাল উদ্দিন ছয় বছর আগে মারা যান। এরপর পরিবারে রাজীব আর আর তাঁর ছোট দুই ভাইয়ের অভিভাবক বলতে কেউ ছিল না।

তখন এতিম তিন শিশুকে দেখভালের দায়িত্ব নেন উপজেলার দাসপাড়া গ্রামের তাদের নানা লাল মিয়া। সেখানেই রাজীবের স্কুলজীবন। রাজীবের খালা জাহানারা বেগম ঢাকায় জিপিওতে চাকরি করেন। তিনি তিনজনের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন। সেই সুবাদেই রাজীব তিতুমীর কলেজে ভর্তি হন। আর অন্য ছোট দুই ভাই ঢাকার একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়।