নৌপথে জাহাজ-জট, লঞ্চ চলাচলে বাধা

Looks like you've blocked notifications!

নৌপথে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে নারায়ণগঞ্জ ঘাটের দূরত্ব আট কিলোমিটার। যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এই পথে লঞ্চ দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করে থাকে। তবে মুন্সীগঞ্জে প্রবেশের মুখে ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষা নদীর মোহনায় শাহ সিমেন্ট, এমিরেটস সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, মেট্রোসেম সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর লাইটার ভ্যাসেল ও জাহাজ এলোমেলোভাবে যাত্রীবাহী নৌপথের ওপর রেখে দেওয়ায় বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে পথটি এবং প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

রাতের বেলায় চাঁদপুর, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। মুন্সীগঞ্জ জেলাবাসীর নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকা যাওয়ার জন্য এই রুটের যাত্রীদের আগ্রহ বেশি। শিগগির এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটবে বলে আশঙ্কা করছে যাত্রীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহ সিমেন্ট, এমিরেটস সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, মেট্রোসেম সিমেন্ট ফ্যাক্টরির বড় আকৃতির জাহাজগুলো এলোমেলোভাবে যাত্রীবাহী নৌপথে রেখে দিয়েছে। মালামাল নিয়ে অনেক জাহাজ নৌপথ আটকিয়ে যাবতীয় কাজ করছে। ধীরগতি নিয়ে এই অংশটুকু পার করে লঞ্চচালকরা। রাতের বেলা কোনো আলোর ব্যবস্থা না থাকায় এসব জাহাজের পাশ দিয়ে বিপজ্জনকভাবে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। চালকরা হাত দিয়ে দূর থেকে ইশারা দিচ্ছে। বিভিন্ন জেলার ১৫ হাজার মানুষ এই পথটি ব্যবহার করে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে নৌপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান একটি পথ হিসেবে পরিচিত।

লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য ও লঞ্চঘাটের ইজারাদার দিল মোহাম্মদ কোম্পানি জানান, মুন্সীগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ নৌপথে আমাদের ২৪টি লঞ্চ চলাচল করে। ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষা নদীর মুখে শাহ সিমেন্ট, এমিরেটস সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, মেট্রোসেম সিমেন্ট ফ্যাক্টরির লাইটার ভ্যাসেল ও বড় জাহাজ এলোমেলোভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো প্রবেশ মুখে চলাচল করতে প্রায়ই বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এই নৌপথে এসব ছোট-বড় দুর্ঘটনার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। সিমেন্টের মালামাল পরিবহনের জন্য সাগর থেকে আসা বড় আকৃতির এসব নৌযানের কারণে ধীর গতি নিয়ে চলাচল করতে হয়।

দিল মোহাম্মদ কোম্পানি আরো জানান, স্থায়ীভাবে বড় আকৃতির অনেক জাহাজ এখানে এলোমেলোভাবে পথের বাধা হয়ে অবস্থান করছে। মালামাল লোড-আনলোডের জন্য দীর্ঘসময় ধরে অবস্থান করে এসব। পণ্যবাহী নৌযানগুলোও নারায়ণগঞ্জ প্রবেশের অন্যতম এই প্রবেশের মুখে এসে বিপাকে পড়ে। যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের নির্ধারিত পথে সিমেন্ট ফ্যাক্টরির বড় আকৃতির জাহাজ রেখে দেয়।

খাজা লঞ্চের চালক মো. শাহীন জানান, নৌরুটটি তারা জাহাজ রেখে সংকুচিত করে ফেলেছে। হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে সিমেন্ট ফ্যাক্টরির জাহাজগুলোকে সিগন্যাল দিতে হয়। এ ছাড়া প্রায় সময়ই ইঞ্চিন বন্ধ করে রেখে অপেক্ষা করতে হয় তাদের জন্য। ফলে নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় লাগছে চলাচল করতে। নোঙর করা এ জাহাজগুলোর আলো ব্যবস্থা না থাকায় রাতের দিকে বিপজ্জনক হয়ে পড়ে।

নৌপথের নিয়মিত যাত্রী মিথুন সাহা জানান, দিনের বেলা কষ্ট করে চলাচল করা গেলেও রাতের বেলা অনেকটা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতে হয়। খুব কাছেও দেখা যায় না নোঙর করা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর জাহাজগুলো।

শাহ সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন জানান, মুক্তারপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ি ও কলাগাছিয়া নৌ ফাঁড়ির নিরাপত্তা দেওয়ায় এখানে লোড-আনলোড করা জাহাজগুলো রাখা হয়। যেসব জাহাজ নৌপথে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে সেসব সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এমভি সজিব লঞ্চের চালক মো. ফরিদ জানান, ভয় নিয়ে পথটুকু অতিক্রম করতে হয়। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে বেঁচে যাওয়া এই নৌপথের যাত্রীদের প্রতিদিনের বিষয়। তাদের একাধিকবার বলা হলেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হচ্ছে।

মুক্তারপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জয়নাল জানান, এর আগে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এসব জাহাজ। ফ্যাক্টরির সুবিধার্থে জাহাজ এখানে অবস্থান করে এবং এসবের নিরাপত্তা প্রদান করে থাকি বলে জানান তিনি।

বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ জোনের নৌ ট্রাফিক পরিদর্শক মো. জসিম জানান, এই নৌপথে শাহ সিমেন্ট, এমিরেটস সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, মেট্রোসেম সিমেন্ট ফ্যাক্টরি আছে। এসবের কাঁচামাল ও মালামাল বহন করে নিয়ে চলে অসংখ্য লাইটার ভ্যাসেল ও বড় আকৃতির জাহাজ। মালামাল লোড-আনলোড করতে দীর্ঘ সময় লাগায় নোঙর করে অবস্থান করে এসব নৌযান। যাত্রীবাহী সব নৌযান নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য নদীতে অভিযান চালানো হয়। যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের উপযোগী ও দুর্ঘটনা এড়াতে এসব জাহাজ ও লাইটার ভ্যাসেল সরিয়ে নিতে বলা হয়। অভিযোগ পেলে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় বলে জানান তিনি।