৪৬ বছর ধরে ফুসফুসে বুলেট জোসনার

Looks like you've blocked notifications!
ফুসফুসে রয়ে যাওয়া একটি বুলেট নিয়ে ৪৬ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন জোসনা বেগম। ছবি : এনটিভি

আশি বছরের বৃদ্ধ জোসনা বেগম। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজধানীর শাহজাহানপুরের নিজ বাড়িতে তাঁর শরীরে আঘাত হেনেছিল তিনটি বুলেট। সে সময় দুটি বের করা গেলেও ফুসফুসে রয়ে যাওয়া একটি বুলেট নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি ৪৬ বছর। 

শেষ বয়সে সেই বুলেট বড় ভোগালেও আর্থিক দুরবস্থার কারণে  প্রতিদিনের ওষুধ কেনার সামর্থ্যই নেই জোসনা বেগমের। অভাবের সংসার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটানো তাঁর কণ্ঠে এখন মানবিক সাহায্যের আবেদন। 

জোসনা বেগম জানান, যুদ্ধের সময় একদিন টিনের চাল ভেদ করে গুলি তাঁর শরীরে লাগে। মনে হচ্ছিল, দম বেরিয়ে যাচ্ছিল আর প্রচুর রক্তও যায় তখন। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ৩০টি ইনজেকশন দেওয়া হয়। 

‘অনেক দিন পর আবার বমি শুরু হয়। তখন হাসপাতালে নিয়ে গেল লোকজন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখল, গুলি যে লেগেছিল তার একটা রয়ে গেছে,’ যোগ করেন জোসনা।   

স্বামী নেই, পেরিয়েছে দশক। চার সন্তানের একজন আক্রান্ত জটিল রোগে। শাহজাহানপুরের এক গলিতে তাই অশীতিপর বৃদ্ধার অভাবের সংসারে শুধুই গাঢ় অন্ধকার। 

জোসনা বেগমের মেয়ের জামাই (৫০) বলেন, ‘একদিন হঠাৎ করেই দেখি নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। তারপর উনাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওষুধপত্র লিখে দিছে। এখন সেই ওষুধ খাওয়াটাই তো কষ্টকর।’

জোসনা বেগমের জমানো টাকার সবটাই শেষ হয়ে গেছে চিকিৎসার পেছনে। তবু ফুরায়নি প্রয়োজন। অনিশ্চয়তা নিয়ে যেখানে দিনের শুরু, সেই পরিবারের মানবিক আবেদন মায়ের জন্য। 

জোসনা বেগমের ছেলের বউ (৪৫) বলছিলেন, ‘উনি তো এখন বাথরুমে গেলেও উঠতে পারেন না। প্রতিদিন পাঁচশ টাকার ওষুধ লাগে। এখন উনাকে ওষুধ খাওয়াব, নাকি সংসার চালাব, নাকি ছেলেমেয়েদের সংসার চালাব, কী করব।’

ফুসফুসে থাকা বুলেটের সৃষ্ট সমস্যা শেষ বয়সে জটিল আকার ধারণ করছে। আরো কিছুদিন বাঁচার ইচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ না করলেও মুক্তিযুদ্ধ বুকে আগলে রাখা জোসনা বেগমের। তিনি বলছিলেন, ‘এখন আমি যত দিন বাঁচি, তত দিন যেন ওষুধটা খেতে পারি, এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই।’  

পাকিস্তানি হানাদারদের বুলেট যাকে হার মানাতে পারেনি, সেই জোসনা বেগম যেন জীবনসায়াহ্ণে দাঁড়িয়ে ওষুধের নিশ্চয়তাটুকু পান, সে অনুরোধ তাঁর, সমাজের বিত্তবানদের প্রতি।