রানা প্লাজা ধস

আইনি জটিলতায় ঝুলে আছে দুই মামলা

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার উপজেলায় ধসে পড়া ভবন রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। এনটিভির পুরোনো ছবি

সাভারে রানা প্লাজা ধসের পাঁচ বছর পূর্তি আজ। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে ধসে পড়ে রানা প্লাজা। ওই ভবনে ছিল একাধিক পোশাক কারখানা। এক হাজারেরও বেশি মানুষকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

এত শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের দুটি মামলায় এখনো শুরু হয়নি সাক্ষ্য গ্রহণ। এতে মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়া ঝুলে গেছে।

মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তবে কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট  আদালতগুলো শুরু করতে পারেননি বিচারকাজ।

ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত এবং এক হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ১৯ জন মারা যায়। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ১৩৬ জন।

‘বিচারকাজ স্থবির’

মামলার নথি থেকে জানা যায়, রানা প্লাজা ধসের সময়ে দায়ের করা দুটি মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হয় ২০১৬ সালে। ওই বছরের ১৫ মার্চ ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শাহজাদী তাহমিদা মামলা দুটির বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এবং বিচারিক আদালতে বদলির আদেশ দেন।

ওই বছরের ১৬ জুন ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মুস্তাফিজুর রহমান।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে বজলুস সামাদ আদনানসহ তিন আসামি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পৃথক তিনটি রিভিশন মামলার আবেদন করেন।

এ বিষয়ে  আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আনোয়ারুল কবির বাবুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রিভিশন মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এসব মামলার সাক্ষ্য গ্রহন শুরু হচ্ছে না। ফলে মামলার বিচারকাজ  স্থবির হয়ে আছে।’

অন্যদিকে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই হত্যা মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে সাত আসামি হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করে। বর্তমানে আবেদনগুলো শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ  আদালতের পিপি মিজানুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ মামলার প্রতিটি ধার্য তারিখে সাক্ষীরা আদালতে এসে উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু আসামিদের করা আবেদন উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় থাকায় সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া যাচ্ছে না।’

জামিন মেলেনি রানার

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দুই মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানা। তাঁর আইনজীবী ফারুক আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই মামলায় রানা গ্রেপ্তারের পর কেটে গেছে প্রায় পাঁচ বছর। এখন পর্যন্ত তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেননি আদালত। তিনি কারাগারেই আছেন। নথি থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের আলাদা দুই মামলায় ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুই মামলায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, তাঁর বাবা আবদুল খালেক ওরফে খালেক কুলুসহ ৫৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তবে আসামিদের মধ্যে ১৭ জনের নাম উভয় মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ থাকায় ব্যক্তি হিসেবে আসামি ৪২ জন। এর মধ্যে হত্যা মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং সাক্ষী করা হয়েছে ৫৯৪ জনকে।

এ ছাড়া ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং সাক্ষী করা হয়েছে ১৩৫ জনকে। এ দুই মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় ৪১ আসামির মধ্যে এক আসামি মারা যাওয়ায় এখন আসামির সংখ্যা ৪০।

এই মামলায় সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক ওরফে খালেক কুলুসহ ৩০ জন জামিনে রয়েছেন। পলাতক আছেন সাত আসামি।

এ ছাড়া সোহেল রানাসহ তিন আসামি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। অন্যদিকে ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ১৮ আসামির মধ্যে সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক ওরফে খালেক কুলুসহ ১২ জামিনে রয়েছেন। পলাতক আছেন তিন আসামি।

ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত এবং এক হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ১৯ জন মারা যায়। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ১৩৬ জন।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পাবনার বেড়ায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক আবদুস সোবহান মারা যান।

ভবন ধসের ঘটনায় আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ আদালতের নির্দেশে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার ব্যক্তিগত সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সরকার।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে ৯ তলাবিশিষ্ট রানা প্লাজা ধসে পড়ে।

ঘটনার পরের দিন সাভার থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ খান অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ ছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন ইমারত নির্মাণ আইনে ১৩ জনকে আসামি করে আরো একটি মামলা করেন।