অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগই দায়ী!
অবৈধ সংযোগ দেওয়ার অপরাধে জরিমানা করা হয়েছে। আদায় করা হয়েছে জরিমানার টাকা। এরপরও বিচ্ছিন্ন করা হয়নি সংযোগগুলো। অভিযোগ রয়েছে, নওগাঁর মান্দা উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘুষ বাণিজ্যের কারণেই চালু রাখা হয়েছিল অবৈধ সংযোগগুলো।
urgentPhoto
আর এ থেকেই শর্টসার্কিট হয়ে প্রাণ দিতে হলো উপজেলার সতীহাট আদর্শ মহিলা হাফেজিয়া বহুমুখী মাদ্রাসা ও এতিমখানার (শিশুসদন) তিন ছাত্রীকে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে রাবেয়া খাতুন (১২), দুর্গাপুর গ্রামের আলম হোসেনের মেয়ে আশা মিম (১৪) ও গোবিন্দপুর গ্রামের সাইদুল ইসলামের মেয়ে শারমিন সুলতানা (১৩)।
এ ঘটনার পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে পরিদর্শনের পর তারা তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আজ শনিবার সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসায় ক্লাস চলছে। এ মাদ্রাসাটিতে প্রায় ১৬৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। দোতলা একটি ভবনে তাঁরা বসবাস করেন। নিচ থেকে দোতলায় ওঠার জন্য একটি সিঁড়ি রয়েছে। এই সিঁড়ির রেলিং সেদিন বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। আহত হয় আরো অন্তত ২০ ছাত্রী। পরে তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, উপজেলার সতীহাট এলাকার আশরাফুল ইসলাম ওরফে আসাব দীর্ঘ ১০ বছর ধরে অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দফায় দফায় ঘুষ দিয়ে সংযোগটি টিকিয়ে রাখেন তিনি।
এর আগে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে কয়েকবার অভিযোগ দিলেও সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়নি বলে এনটিভি অনলাইনকে অভিযোগ করেন মাদ্রাসার প্রধান মোয়াল্লেম মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।
নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের উত্তর পাশের আতাউর রহমান মার্কেটের ভাড়াটিয়া ডেকোরেটর ব্যবসায়ী বাবুল কুমার সরকারের মিটার থেকে অবৈধ সংযোগটি নেন আশরাফুল। বাবলু কুমারের দোকানঘর থেকে মহাসড়ক পেরিয়ে প্রায় ২৫০ মিটার তার দিয়ে এ অবৈধ সংযোগটি দেওয়া হয়।
এ ছাড়াও নাহিদ দেওয়ান নামে এক ব্যক্তি নিজের দোকানঘর থেকে এবং প্রতিবেশী ফেরদৌস দেওয়ান আলমগীরের মিটার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নিজেদের বাড়িতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেন।
লুজ তারের মাধ্যমে এ তিনটি অবৈধ সংযোগই গিয়েছে মাদ্রাসার টিনের ছাউনির ওপর দিয়ে। তিনটির যে কোনো একটি সংযোগ থেকে মাদ্রাসার রেলিং বিদ্যুতায়িত হয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। যদিও বৃহস্পতিবার বিকেলে মর্মান্তিক এ ঘটনার পর তারগুলো সরিয়ে ফেলা হয়।
স্থানীয়রা আরো জানান, গত জুন মাসে অবৈধ সংযোগ দেওয়ার অপরাধে আতাউর রহমান মার্কেটের ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী বাবুল কুমারের তিন হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে বাবুলের মিটারের চাবি কাটা অবস্থায় দেখা যায়। উপস্থিত লোকজন মিটারটি টেম্পারিং হয়ে থাকতে পারে বলে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন লাইনম্যান এ দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
অবৈধ সংযোগের কারণে বাবুল কুমারের তিন হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ফজলুর রহমান। তবে সংযোগটি কেন বিচ্ছিন্ন করা হয়নি জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় ওই রাতেই মান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সালাম বাদী হয়ে আশরাফুল ইসলাম ওরফে আসাব (৫০), তাঁর স্ত্রী আসমা বেগম (৪০), জামাতা মোস্তফা (২৫) ও মেয়ে আশা খাতুনের (২০) বিরুদ্ধে অবৈধ সংযোগ ও বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।