‘দুর্নীতি করে স্বামী, জেল খাটে স্ত্রী’

Looks like you've blocked notifications!
আজ রোববার টিআইবি আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য দেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। ছবি : এনটিভি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের স্ত্রীরা সবচেয়ে বেশি স্বামীর অবৈধ সম্পদের জন্য সাজা পেতে হয়েছে। তার পরই রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রীরা।

আজ রোববার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত এক সেমিনারে এমন তথ্য উপস্থাপন করা হয়। তবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন স্বামীর অপরাধের জন্য স্ত্রীদের এভাবে সাজাপ্রাপ্ত হওয়াটা কাম্য নয়। 

এ দেশে যে কতভাবে নারীরা ভুক্তভোগী হচ্ছেন তার একটি নমুনা যেন উঠে এসেছে টিআইবির এই বিশ্লেষণে। যেখানে দেখানো হয়, ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুদক কর্তৃক মামলায় আদালতের রায়ে স্বামীর অবৈধ সম্পদ স্ত্রীর নামে রাখায় সবচেয়ে বেশি সাজার শিকার হয়েছেন রাজনীতিবিদের স্ত্রীরা। শতকরা হিসেবে ৫৫ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে আছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রীরা। যা ২১ শতাংশ। আর মোট সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ১০ ভাগের পরিচয় তাঁরা ব্যবসায়ীদের স্ত্রী।  

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতির যে মামলাগুলো হয়, সেখানে অবৈধ আয়ের মাধ্যমে যে সম্পদ অর্জিত হয় সেটার বোঝা পুরুষের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রেই যৌক্তিক কারণে, অনেক ক্ষেত্রে অযৌক্তিক কারণে নারীর উপরে পরে।’ 

অপরাধ করবেন স্বামীরা আর এজন্য সাজা পাবেন তাদের স্ত্রীরা। এটা মোটেও কাম্য নয় বলে দুদক চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত আলোচকদের অনেকেই একমত। তবে এর জন্য অনেকেই দায়ী করছেন বর্তমান সময়ে দুর্নীতি সামাজিকভাবে ঘৃণিত হয় না বলে। 

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমার এক বন্ধু, আমরা তখন চাকরি শুরু করেছি মাত্র, আমি জিজ্ঞেস করেছি, ঘুষ খেয়ে তুই টাকা কী করস, তাও প্রায় ২৫ বা ৩০ বছর আগে, বলে সমস্যা আছে বুঝছিস, টাকা আনছি কিন্তু আইনা বউয়ের সামনে দিতে পারছি না। আমি বললাম, কেন, বলল, জিজ্ঞেস করে যে, এই টাকা কই পাইলা?’ 

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইডের আবাসিক প্রতিনিধি ফারাহ কবির বলেন, ‘মানে, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন শুনেছিলাম কে যেন সরকারি দুর্নীতি করেছিল থ্রি নট থ্রি না কি যেন একটা হয়েছিল মানে বলতেও পারব না। স্ক্যান্ডেল এবং তাঁদের সঙ্গেও কেউ যোগাযোগ করত না। আর এখন আপনি বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন যে দেখে নেব কে আমাকে কী করবে।’

দুদক চেয়ারম্যান আরো বললেন, ‘এরই মধ্যে অনেক নারী স্বামীর দুর্নীতির কারণে সাজাপ্রা্প্ত হয়েছেন এবং ভবিষ্যতে আরো হবেন। তার প্রশ্ন, এই ধারা চলতে থাকবে কি না?’ 
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ব্যাপারটা আমি যেই কনসেপ্টে এই আলোচনাটা শুরু করার জন্য চেয়েছিলাম এবং সেটা হয়েছে। কিন্তু আমি এখনো ওই সমাধানে আসতে পারিনি।

সমাধানটা হচ্ছে এই, সমাধান চাচ্ছি এইটা, যিনি জানেন না তাঁকে কেন আমি…। ইভেন মিনিস্ট্রিকেও আমি বলেছি যে, ভাই কিছু একটা করেন। নারীরা তো ভিকটিম হয়ে যাচ্ছে এক। দুই, আমাদের নারীরাই যদি সচেতন হয়ে যায় তাহলে প্রিভেনশনও হয় আমাদের। প্রিভেনশন একটা কাজও হয় এবং দুর্নীতি কিন্তু যদি নারীরা জিজ্ঞেস করে যে টাকা কই পাইলা।’     

এদিকে টিআইবির অনুসন্ধানে আরো উঠে এসেছে স্বামীর অবৈধ সম্পদের জন্য স্ত্রীদের ব্যাপারে বর্তমানে যে দুদক অনুসন্ধান করছে, তার বেশিরভাগই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রী।