খুলনা-দর্শনা রেলপথ ডাবল লাইন হচ্ছে

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে আজ মঙ্গলবার একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : ফোকাস বাংলা

খুলনা থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ করা হবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেয়েছে।

প্রকল্প অনুযায়ী খুলনা থেকে দর্শনা পর্যন্ত ১২৬ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত করা হবে। ভারত সরকারের প্রতিশ্রুত দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটের অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

আজ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে চলতি অর্থবছরের ২৩তম একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমজীবী শিশুর সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানতে পরিসংখ্যান ব্যুরোকে নির্দেশ দেন। একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আসন্ন রমজানে মূল্যস্ফীতি কম থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।

বৈঠকের পরে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আজ মোট ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।

মন্ত্রী বলেন, একনেক বৈঠকে মোট ১৫টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। পরে দুটি প্রকল্প পুনরায় নিরীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানো হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ রেলওয়ের অনুমিত ৩ হাজার ৫০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘কনস্ট্রাকশন অব ডাবল লাইন রেলওয়ে ট্রাক অন খুলনা-দর্শনা জংশন সেকশন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন, প্রকল্প ব্যয়ের ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ভারতের দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটের অধীনে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে আসবে। অবশিষ্ট ৮১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা আসবে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে।

মন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্প সম্পন্ন হলে জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ক্রমবর্ধমান রেলওয়ের চলাচলের চাহিদা মেটানো যাবে এবং এতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগ জোরদার হবে। পাশাপাশি ডাবল লাইন ট্রাক পদ্মা ব্রিজ নির্মাণের পরে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

খসড়া উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) বলা হয়েছে, ঢাকা-খুলনা করিডোরে খুলনা-দর্শনা সেকশন বর্তমানে সিঙ্গেল বিজি লাইন। এটি সরাসরি খুলনা-ঢাকা-খুলনা-চিলাহাটি এবং খুলনা রাজশাহী রুটে যুক্ত হবে। প্রকল্পের অধীনে খুলনা-দর্শনা সেকশনে প্রায় ১২৬ দশমিক ২৫ কিলোমিটার বিজি রেলওয়ে ট্রাক ডাবল লাইনে উন্নীত করা হবে। এতে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা যাবে।

তাছাড়া এই প্রস্তাবিত ডাবল লাইন রেলপথে হরিয়ান, ভেড়ামারা, সান্তাহার, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম স্টেশন, আমানুরা, ফরিদপুর, ঠাকুরগাঁও ও রংপুরের প্রস্তাবিত জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি পরিবহনেরও সুবিধা থাকবে।

এই ডাবল লাইন রেলপথ স্থাপিত হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগের সুযোগ হবে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেলপথ বসানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে নেপাল ও ভুটানের আমদানিকারকরাও এই নতুন রেলপথ ব্যবহার করে মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করতে পারবেন।

মূল প্রকল্প কার্যক্রমে ১২৬ দশমিক ২৫ কিলোমিটার মূল লাইনের কাজ, ১৪ দশমিক ৪০ কিলোমিটার লুপ লাইন, ৩১৭ মিটার সেতুর কাজ, সিগনালের কাজ, বৈদ্যুতিক কাজ ও ১১০ একর ভূমি অধিগ্রহণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

খুলনা জেলার খানজাহান আলী এলাকা ও ফুলতলা উপজেলা, যশোর  জেলার সদর ও অভয়নগর উপজেলা, ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর উপজেলা এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর ও দামুরহুদা উপজেলা এই প্রকল্পের আওতাধীন থাকবে।

আজ একনেক বৈঠকে বরিশাল বিভাগের ৪২টি উপজেলায় ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে লোহার ব্রিজ পুনর্নিমাণ ও পুনর্বাসনের একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, দেশের বিদ্যমান লোহার ব্রিজগুলো ধীরে ধীরে আরসিসি ব্রিজে প্রতিস্থাপন করা হবে।

অন্যান্য অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো হলো ৩১৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ উন্নয়ন (সংশোধিত) প্রকল্প, ৩১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে নওগাঁ সড়ক বিভাগের অধীনে দুই জেলার মহাসড়কের যথাযথ মান ও প্রশস্তকরণ, ১৯৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে জয়পুরহাট বিভাগের হিচমি-পুরান পুল-পাঁচবিবি হিলি (সংযোগ সড়কসহ) মহাসড়কের উন্নয়ন।

এছাড়া ১১৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নড়াইল-ফুলতলা জেলা মহাসড়কের মান ও প্রশস্তকরণ উন্নয়ন, ৯২ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে উল্লাপাড়া রেলওয়ে ওভারপাস, রংপুর সিটি করপোরেশনে  ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ৪৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ন্যাশনাল জিন ব্যাংক, ২৮৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ঝুকিপূর্ণ শিশু শ্রম নিরসন (চতুর্থ পর্ব) প্রকল্প, ২৮১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে জামালপুরের মেলান্দহে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (প্রথম সংশোধন) প্রকল্প, ৭৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ জেলায় শিল্পকলা একাডেমির নবায়ন, পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প এবং এসএএসইসি সংযোগ সড়ক প্রকল্প : ৫ হাজার ৫৯৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা (এন-৮) মহাসড়কের চার লেনে উন্নীতকরণ (দ্বিতীয় সংশোধন)।